কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
বিশেষ প্রতিবেদন : দেবজিৎ গাঙ্গুলী
কথা ছিল, বিকেল পাঁচটা থেকে থেমে যাবে গর্জন। কথা ছিল, অস্ত্র নামিয়ে আসবে দুই প্রতিবেশী। কিন্তু বাস্তবে? জম্মু-কাশ্মীরের আকাশে রাত নামতেই আবার শুরু হলো আগুনের খেলা।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার ঘণ্টাখানেক পরেই, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের আখনূর সহ একাধিক সেক্টরে নতুন করে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা সামনে এল। পাক সেনার দিক থেকে নেমে এল আর্টিলারি শেলিং ও ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির বৃষ্টি। সীমান্তের গ্রামগুলো আবারও কেঁপে উঠল বিস্ফোরণে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই, বিকেল ৩:৩৫ মিনিটে পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করেছিলেন ভারতীয় ডিজিএমও-কে। এরপরই সিদ্ধান্ত হয়, বিকেল ৫টা থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে বন্ধ থাকবে সব ধরনের সামরিক আগ্রাসন। একে ‘মেজর ডি-এস্কালেশন’ বা উত্তেজনা হ্রাসের বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, “শান্তির স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সমঝোতা একমাত্র তখনই কার্যকর থাকবে, যদি লঙ্ঘন না হয়।”
কিন্তু তার কিছু সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানের দিক থেকেই সেই সমঝোতার অপমান—সরাসরি যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন।
রাতের আখনূর-কেন্দ্রিক এই গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সেনা সূত্রের বক্তব্য, “পুরনো ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। কথা বলবে, চুক্তি করবে, তারপর রাতের আঁধারে চালাবে হামলা—এই চেনা পাক কৌশল।”
তবে শুধু আখনূর নয়, পুঞ্চ, রাজৌরি-সহ আরও কিছু ফ্রন্টেও sporadic ফায়ারিং-এর খবর পাওয়া গিয়েছে।
আগামী ১২ই মে দুপুর ১২টায় ফের কথা বলবেন দুই দেশের ডিজিএমও। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—যদি আজকেই বিশ্বাস ভঙ্গ হয়, তবে আগামী আলোচনায় ভরসার জায়গাটা কোথায় দাঁড়াবে?
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল বৃহত্তর আঞ্চলিক শান্তির স্বার্থে। কিন্তু পাকিস্তানের তরফে এই চুক্তি লঙ্ঘন আবারও প্রমাণ করল—এখনও বহু দূরে সেই কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একদিকে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালায়, অন্যদিকে পাকিস্তানের এই আচরণ সেই চেষ্টাকে ধাক্কা দিচ্ছে।
ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে—“যুদ্ধবিরতি তখনই অর্থবহ, যদি তা কার্যকর থাকে। একতরফা আত্মসংযম নয়, চাই পারস্পরিক শ্রদ্ধা।”
আজ রাতের গোলাগুলি সেই শ্রদ্ধার অভাবকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নির্ধারিত হবে আগামী দিনগুলিতে। আপাতত সীমান্তে আবারও থমথমে উত্তেজনা—আর রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, এক নিঃশ্বাসে উঠছে প্রশ্ন: ‘এটাই কি যুদ্ধবিরতির আসল চেহারা?’