কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
বিশেষ প্রতিবেদন : দেবজিৎ গাঙ্গুলী
৭ মে — যখন ভারতীয় বায়ুসেনা ও স্থলবাহিনী পাকিস্তান ও পিওকে-তে টার্গেট করে অপারেশন ‘সিন্দুর’ চালাচ্ছে, তখন আরব সাগরের ঢেউয়ের নিচে নিঃশব্দে কাঁপছিল করাচি বন্দরের আকাশ। কারণ, ভারতীয় নৌবাহিনী সেই মুহূর্তে ছিল সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে—যেকোনও সময়ে করাচি কিংবা অন্য সামুদ্রিক টার্গেটে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত।
রবিবার তিন বাহিনীর যুগ্ম সাংবাদিক বৈঠকে নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল এ এন প্রমোদ এক তাৎপর্যপূর্ণ বিবৃতিতে জানান, “আমাদের জাহাজগুলি আরব সাগরে অগ্রসারিত অবস্থানে ছিল। আমরা নির্ধারিত সময় ও জায়গায় আঘাত হানার সম্পূর্ণ প্রস্তুতিতে ছিলাম—চাই তা করাচি হোক বা সমুদ্রপথের অন্য কোনও লক্ষ্য।”
২২ এপ্রিল, কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন। তার জবাবেই ৭ মে চালু হয় ‘অপারেশন সিন্দুর’। ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনা যৌথভাবে চালায় সার্জিক্যাল ও এয়ার স্ট্রাইক, লক্ষ্য — সন্ত্রাসের ঘাঁটি। আর ঠিক সেই সময়েই, সমান্তরালভাবে প্রস্তুত ছিল নৌবাহিনী—যদি সমুদ্রপথেও জবাব দিতে হয়।
নৌবাহিনীর কৌশলগত অবস্থান এমন ছিল যে পাকিস্তানের অধিকাংশ নৌ ইউনিট বন্দরে আটকে পড়েছিল। ভাইস অ্যাডমিরালের কথায়, “আমরা পাকিস্তানের প্রতিটি সামুদ্রিক গতিবিধি নজরে রেখেছি। তারা আমাদের অবস্থান জানত এবং সেই ভয়েই তাদের যুদ্ধজাহাজগুলো সমুদ্র ত্যাগ করার সাহস পায়নি।”
পাহেলগাম হামলার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যেই নৌবাহিনী চালায় লাইভ ফায়ারিং এক্সারসাইজ। একের পর এক অস্ত্র পরীক্ষা, টার্গেট ফায়ার, কৌশল পুনঃপ্রশিক্ষণ — যেন প্রতিটি কমান্ড, প্রতিটি গোলা ও প্রতিটি জাহাজ নিখুঁতভাবে প্রস্তুত থাকে।
“আমরা যুদ্ধের জন্য নয়, সুনির্দিষ্ট, দায়িত্বশীল এবং পরিমিত জবাবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। ভারতের প্রতিটি প্রতিক্রিয়া ছিল পরিণত, অনুপাতসঙ্গত এবং অ-উস্কানিমূলক।”
সেনা-অভিযানের পাশাপাশি কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানকে একঘরে করতে পদক্ষেপ নেয় ভারত। ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করা হয়, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা হয়, আকাশপথ বন্ধ করা হয়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদতদাতার অভিযোগে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ভারতের বার্তা স্পষ্ট:“যদি সন্ত্রাস আসে, জবাব হবে—স্থল থেকে, আকাশে, কিংবা সাগরের বুকে!”
ভারতীয় নৌবাহিনীর এই স্তব্ধ প্রস্তুতি ছিল যেন এক নিষ্পলক সমুদ্রের মতো—যা বাইরের চোখে শান্ত, কিন্তু গভীরে ছিল গর্জনের অপেক্ষা। পাকিস্তান হয়তো বুঝেছে, করাচি বন্দরের চুপচাপ নোঙর করা যুদ্ধজাহাজগুলোও ভারতের “সিন্দুর”-এর স্পর্শে হঠাৎ হারিয়ে যেতে পারত।
ভারত এবার শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির মাধ্যমে দিচ্ছে কৌশলগত বার্তা — “শান্তি চাই, তবে ভয় না পেয়ে নয়।”