কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : বিশেষ প্রতিবেদন :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
রাত্রির গভীরে, যখন শহরের আলো নিভে আসে আর সংবাদপত্রের প্রেসে চাকা ঘুরতে শুরু করে, ঠিক তখনই কোনও এক মানচিত্র আঁকা হয় ঢাকার শহীদ মিনারের ছায়ায়। তাতে দেখা যায়, ভারতের সাত রাজ্য — পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং আরও কিছু পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল — আচমকাই এক অপরিচিত রঙে রাঙানো। উপর লেখা: ‘Greater Bangladesh’।
এ কোনও কল্পবিজ্ঞান নয়, বরং বাস্তবেই ঘটেছে ঢাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে। সেখানে এক নবগঠিত সংগঠন সলতনতে বাংলা (Saltanat-e-Bangla বা SeM) তাদের তথাকথিত নতুন রাষ্ট্রচিন্তার মানচিত্র তুলে ধরে বলেছে — “আমরা ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে চাই”।
কিন্তু ইতিহাস কি এতটাই নিরীহ ?
সলতনতে বাংলার নাম শুনলেই অনেকের মনে পড়ে যায় ১৩৫২ থেকে ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলার স্বাধীন মুসলিম শাসনকাল। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকে না অর্থ। এই সংগঠনের নাম যেন এক প্রতীকী ঘোষণাপত্র — “আমরা ফিরিয়ে আনব সেই ধর্মভিত্তিক শাসনের স্বপ্ন, আধুনিক ভূগোলকে অস্বীকার করে।”
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তৎপরতা বেড়েছে। কারণ এই গোষ্ঠী শুধু মুখেই নয়, কাজেও শুরু করেছে তাদের “ছায়া রাষ্ট্র”-গঠনের প্রক্রিয়া।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ভয়ানক এক যোগসূত্র। সলতনতে বাংলার অর্থদাতা হিসেবে উঠে এসেছে দীনা আফরোজ ইউনুস-এর নাম, যিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস-এর কন্যা। তাঁর পরিচালিত এনজিও CSS-Bangladesh এখন এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর রিক্রুটমেন্ট ও লজিস্টিক ঘাঁটি হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ।
এই NGO-এর অধীনস্থ বারাওয়াহ-ই-বাংলাল নামক একটি গোপন ইউনিট কাজ করছে তরুণদের মগজধোলাই করে ক্যাডার তৈরির লক্ষ্যে। অস্ত্র নয়, কিন্তু মগজে বপন করা হচ্ছে এক নতুন জাতির স্বপ্ন — যার ভিত্তি ইতিহাস নয়, রাজনৈতিক নৈরাজ্য।
প্রশ্ন উঠছে, শেখ হাসিনার পতনের পরে কি বাংলাদেশ আবার চরমপন্থার দিকে ফিরে যাচ্ছে? যখন পুরনো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো রাজধানীতে আবার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন এই নতুন “সলতনত” আদৌ কি কোনও বিচ্ছিন্ন সংগঠন, না কি বৃহত্তর একটি রাজনীতির অংশ?
ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে যখন সুরক্ষার ঘেরাটোপ ক্রমে পাতলা হয়ে আসছে, তখন এই গোষ্ঠীর মানসিক সন্ত্রাস এক গভীর বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে।
নয়া দিল্লি এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু কূটনৈতিক স্তরে প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কি সত্যিই উদাসীন, নাকি পরোক্ষে এই স্লোগানকে প্রশ্রয় দিচ্ছে?
ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, এই কার্যকলাপের ধরন হুবহু মিলছে অতীতে নিষিদ্ধ হওয়া ইসলামি চরমপন্থী সংগঠনগুলোর সঙ্গে।
একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন,
“এটা শুধু সীমানা লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্র নয়, বরং গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধেই এক আদর্শিক যুদ্ধ। যে লড়াই মানচিত্রে নয়, মনস্তত্ত্বে।”
সলতনতে বাংলার নাম এখন কাগজে ছাপা। কিন্তু তাদের লক্ষ্য আরও গভীর — ইতিহাসকে অস্ত্র করে এক ভূরাজনৈতিক জুয়া খেলা।আবারও প্রমাণিত হচ্ছে, যতটা না ভয় লাগে বোমার শব্দে, তার চেয়ে ঢের বেশি আশঙ্কা জাগে চুপিচুপি আঁকা মানচিত্রে।