কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত সজীব ওয়াজেদ জয় শিগগিরই ভারত সফরে আসছেন। আগামী দিনগুলোতে এই সফর শুধু পারিবারিক পুনর্মিলন নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি নতুন মোড় আনতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জয় ইতোমধ্যেই ভারতে আসার জন্য ভিসা পেয়ে গেছেন। তিনি নিউ ইয়র্কে ভারতের হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রাপ্তির পর তাঁর সফরের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সফরে তাঁর মা শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ মাসব্যাপী বিচ্ছেদের পর প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হতে চলেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, জয় দিল্লির পাশাপাশি কলকাতাও সফর করতে পারেন, যেখানে বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রায় ৮০ জন প্রাক্তন সংসদ সদস্য, শতাধিক সাবেক আমলা এবং অসংখ্য দলীয় কর্মী। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে তারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন,
“আমরা কেউই নিরাপদ ছিলাম না। যেকোনো সময় রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হতো। ভারতে এসে প্রাণ রক্ষা করেছি।”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পর জয়-এর পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। ফলে গ্রিনকার্ড থাকলেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করতে পারছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং গত শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে শপথ গ্রহণ করেন।
এক প্রবাসী সংসদ সদস্য বলেন,
“জয়ের কাছে পাসপোর্ট পাওয়া ছিল শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং ছিল রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকার একমাত্র পথ।”
অন্যদিকে গত ১০ মে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত।” কিন্তু বিরোধীপক্ষ একে বলছে “আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান”।
বর্তমানে ভারতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছেন তাঁর সমর্থকরা।
পাশাপসী এক বিবৃতিতে জয় বলেন,“গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সবচেয়ে স্থিতিশীল ও দক্ষ সরকার পরিচালনা করেছেন আমার মা শেখ হাসিনা।”
অপরদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করলেও, নয়াদিল্লি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। কারণ হিসেবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, “এটি একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, যা আইনি বৈধতা পায় না। সুতরাং এটি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পড়ে না।”
জয়ের ভারত সফর শুধুই মায়ের সঙ্গে দেখা নয়—বিশ্লেষকদের মতে, এটি হতে পারে প্রবাস থেকে একটি রাজনৈতিক পাল্টা আক্রমণের সূচনা। আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই এখনও হাসিনা ও জয়ের নেতৃত্বে আস্থাশীল। এমন অবস্থায় এই সফর ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করতে পারে।