কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিবেদন :কলকাতা :
আর চোখে দেখেই ফিটনেস সার্টিফিকেট’ নয়। রাজ্যের গাড়িগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এবার আসছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। রাজ্য সরকার তৈরি করছে অত্যাধুনিক অটোমেটেড টেস্টিং স্টেশন (Automated Testing Station – ATS)। প্রথম ধাপে তৈরি হবে ১২টি স্টেশন। পরীক্ষায় পাশ করলেই মিলবে ফিটনেস সার্টিফিকেট (CF)। ব্যর্থ হলে? রাস্তায় নামার অনুমতিও মিলবে না।
পরিবহণ দপ্তর জানিয়েছে, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, কোচবিহার ও দার্জিলিং—এই ১২ জেলায় প্রথমে তৈরি হচ্ছে এই আধুনিক স্টেশন। প্রতিটি স্টেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় এক একর জমি, যার চিহ্নিতকরণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এখনও রাজ্যের ৫৭টি জায়গায় গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা হয় পুরনো, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে—যেখানে মোটর ভেহিকল টেকনিক্যাল অফিসার চোখে দেখে যানবাহনের যন্ত্রাংশ খুঁটিয়ে দেখেন।
তবে এত বছর ধরে পরিবহণ ব্যবসায়ী ও গাড়ি মালিকদের অভিযোগ ছিল—এই পদ্ধতিতে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে না। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়।
এ বার সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এই ‘যান্ত্রিক পরীক্ষা’ রূপান্তর ঘটাবে গাড়ির ফিটনেস চেকিং সিস্টেমকে।
নতুন পদ্ধতিতে গাড়িকে বিশেষভাবে তৈরি টানেলের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই টানেলে থাকবে উন্নত ক্যামেরা, সেন্সর ও নানা প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা হবে ব্রেক, হেডলাইট, সাসপেনশন, স্টিয়ারিং, নির্গত ধোঁয়ার মাত্রা সহ নানা বিষয়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই সেই ফলাফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপলোড হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বাহন’ ওয়েবসাইটে। অর্থাৎ, কোনও দপ্তরের দরজায় ঘুরতে হবে না, সার্টিফিকেট মিলবে সোজাসুজি অনলাইনে।
পরিবহণ দপ্তরের আশা, ২০২৫ সালের মধ্যেই এই ATS চালু হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্যান্য জেলাতেও এই পরিষেবা চালু করা হবে।যে জেলাগুলিতে এখনও এই স্টেশন থাকবে না, সেই জেলার গাড়ি মালিকরা নিকটবর্তী স্টেশনে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারবেন। তবে প্রথম দফায় যে ১২ জেলায় স্টেশন তৈরি হচ্ছে, সেখানে এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।
যদিও এখনও পর্যন্ত ফিটনেস পরীক্ষার খরচ নির্ধারণ হয়নি। তবে সরকার জানাচ্ছে, খরচ হবে যুক্তিসঙ্গত ও স্বচ্ছ। আগের মতো ‘পার্সোনাল সোর্সে’ সার্টিফিকেট তোলার সুযোগ আর থাকবে না।
উল্লেখ অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এটা বহু দিনের দাবি ছিল। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষায় গাড়ির প্রকৃত স্বাস্থ্য নির্ণয় সম্ভব হবে। এটা শুধু যাত্রী নিরাপত্তারই প্রশ্ন নয়, পরিবেশ রক্ষার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
টেকনোলজির দৌলতে গাড়ির স্বাস্থ্য এখন আর আন্দাজে নয়, পরিশীলিত পরীক্ষায়। রাজ্যের রাস্তায় চলবে আরও নিরাপদ ও দূষণমুক্ত যানবাহন—এটাই লক্ষ্য প্রশাসনের।