কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিবেদন :
বিয়েবাড়ির আনন্দে তখন ভাসছে গোটা গ্রাম। বাইরে বাজছে ঢাক, ভিতরে হাসি-ঠাট্টা। আর সেই সময়েই কিছু দূরে, গ্রামের মহিলা মণ্ডল অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বন্ধ গাড়ির ভিতরে ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছিল চারটি শিশুর প্রাণ।
অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানাগ্রামের দ্বারপুডি গ্রামে রবিবার দুপুরে ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা, যার সাক্ষী থাকল একটা গাড়ি, একটা বিয়েবাড়ি—আর এক নিস্তব্ধ কান্না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ থেকে ৮ বছর বয়সি চার শিশু—উদয়, চারুমতি, করিশমা এবং মানাসভি—রবিবার সকালে গ্রামের এক বিয়েবাড়িতে এসেছিল পরিবারের সঙ্গে। অনুষ্ঠান চলাকালীন তারা খেলার ছলে ঢুকে পড়ে মহিলা কাউন্সিলারের অফিসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ির ভিতরে।
প্রাথমিকভাবে অনুমান, শিশুরা নিজেরা গাড়ির দরজা ভেতর থেকে লক করে দেয়, এবং সেই দরজা আর খোলা যায়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা আটকে ছিল সেখানেই—বাইরের কেউ বুঝতেই পারেনি।
বিয়ের উৎসব চলছিল গ্রামে—সেই শোরগোলের মাঝেই হারিয়ে যায় চারটি ছোট্ট প্রাণ। পরিবারের লোকজন তাদের খোঁজ করতে শুরু করেন অনেকক্ষণ পর। গ্রামের অলিগলি ঘুরে অবশেষে ওই গাড়ির ভিতর থেকে মেলে চারটি নিথর দেহ।
গাড়ির জানালা বন্ধ ছিল, দরজার লক ভাঙা বা জ্যাম ছিল বলেই সন্দেহ স্থানীয়দের। একসময় অতিরিক্ত গরম, অক্সিজেনের অভাব ও বাতাসের ঘাটতিতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় চারজনের—জানায় পুলিশ।
রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী কোন্ডাপল্লি শ্রীনিবাস ঘটনার কথা শুনে গভীর শোকপ্রকাশ করেন। তিনি জানান, “ওই পরিবারটি বিয়েতে অংশ নিতে এসেছিল। শিশুরা কাছেই খেলা করছিল। কিন্তু এমন ট্র্যাজেডি কেউ কল্পনাও করেনি।”
শিশুদের মধ্যে একজন বালক, বাকি তিনজন বালিকা। এই মৃত্যুর খবরে গ্রামে এখন শোকের ছায়া, আর বিয়েবাড়ির আনন্দ গিলে ফেলেছে এক নিঃশব্দ হাহাকার।
সতর্কতা না থাকলে এমন ঘটনা যে কোনও সময় ঘটতে পারে
এ ধরনের ঘটনার পেছনে সাধারণত বন্ধ গাড়ির ভিতরে আটকে পড়া ও পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের অভাবই প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধ গাড়িতে খেলতে যাওয়া শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত।
অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনেরও দাবি—এ ধরনের গাড়িগুলি যেন ফাঁকা জায়গায় বা জনবহুল এলাকায় খোলা অবস্থায় ফেলে না রাখা হয়।
চারটি নাম, চারটি মুখ, চারটি স্বপ্ন—বন্ধ হয়ে গেল একটি দরজার ওপাশে। সেই দরজা আজও হয়তো ঠিকভাবে খোলে না। কিন্তু যাদের প্রাণটা আটকে রইল সেখানে, তাদের গল্প খোলা রাখতে হবে আমাদেরই।