কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব সংবাদদাতা :শ্রীনগর :
পহেলগামে রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হানার পর ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আবহে সীমান্তবর্তী এলাকায় একের পর এক সুড়ঙ্গের খোঁজ মিলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে তৈরি এই সুড়ঙ্গগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে আধুনিক ও সংগঠিত।
সীমান্ত লাগোয়া জম্মুর বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব সুড়ঙ্গের হদিশ মিলেছে, সেগুলোর দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটারের বেশি এবং কোনো কোনো সুড়ঙ্গ প্রায় ৩০ মিটার গভীর। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই সুড়ঙ্গগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসানো রয়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা, এই সুড়ঙ্গে জঙ্গিরা কয়েক দিন অনায়াসে লুকিয়ে থাকতে সক্ষম।
গত দেড় বছরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অন্তত ২২টি সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছে সেনা ও বিএসএফ। পহেলগামে হামলার ঠিক আগে এবং পরে নতুন করে আরও কিছু সুড়ঙ্গ চিহ্নিত হয়েছে, যার ফলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, এক সুপরিকল্পিত অনুপ্রবেশ কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সুড়ঙ্গগুলি ব্যবহার করা হয়েছে।
২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরন উপত্যকার একটি পর্যটন রিসর্টে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। নিরাপত্তা সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলাকারীরা প্রথমে পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে, তারপর খুব কাছ থেকে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করে। এই পদ্ধতি মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন হামাস-এর আক্রমণের কৌশলের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়, যাদের বহু সদস্য সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছয়।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, হামলার আগে পিওকে-তে হামাস, লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মহম্মদ-এর নেতাদের গোপন বৈঠক হয়েছিল। তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, এই বৈঠকে পহেলগামে হামলার ছক চূড়ান্ত হয় এবং হামাস-এর ছক মেনেই পুরো অপারেশন চালানো হয়।
সন্দেহ জোরালো হচ্ছে যে, পহেলগামের হামলাকারী জঙ্গিরা সুড়ঙ্গপথে ভারতে প্রবেশ করেছিল। কারণ, সশস্ত্র জঙ্গিদের কয়েক দিন লুকিয়ে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে হামলা চালানোর পরিকল্পনা অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দারা এখন আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছেন সীমান্ত লাগোয়া প্রতিটি সুড়ঙ্গ ও সেগুলোর গতিপথ।
জঙ্গিদের মদতদাতাদের (ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স বা OGW) জেরা করে এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার ও হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে নেমেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। প্রতিটি সুড়ঙ্গ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ হুমকি আটকানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।