spot_img
36.6 C
Kolkata
Saturday, June 14, 2025
spot_img

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে তৎপর আমেরিকা, সতর্ক নজরে ভারত !

কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিবেদন :

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে একটি ‘মানবিক করিডোর’ গঠনের প্রস্তাব নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে আমেরিকা। ঢাকায় নিযুক্ত তিনজন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক, আমেরিকান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের নেতৃত্বে, সোমবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই বৈঠকটিকে ওয়াশিংটনের শেষ চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোভাব পরিবর্তনের লক্ষ্যে। একইসঙ্গে এই কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রতি গভীর নজর রাখছে ভারত—বিশেষত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের চলমান ক্যালাদান প্রকল্পের কারণে।

এই বৈঠকের আগেই, ১৮ মে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের তেজগাঁও কার্যালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন ইউনুস নিজে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান কর্মরত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান।

তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা: সীমান্তে বিদেশি প্রভাব বা ‘মানবিক করিডোর’-এর নামে সামরিক প্রেক্ষাপট তৈরি—বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সেনাপ্রাঙ্গণে জেনারেল জামান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন বলে জানা গেছে, যেখানে রাজধানীতে অবস্থানরত সমস্ত ‘অ্যাভেইলেবল অফিসার’-দের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে পূর্ণ যুদ্ধ পোশাকে। পরে প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ইউনুসের সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকও নির্ধারিত আছে।

মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায়ও সেনাপ্রধান তাঁর পূর্বের অবস্থান থেকে একচুলও না সরে দাঁড়াননি বলেই সেনাসূত্রে খবর। বৈঠকে ছিলেন মার্কিন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এরিক গিলান এবং প্রতিরক্ষা সংযুক্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাইকেল ডেমিকেই। বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানরাও সেনাপ্রধানের অবস্থানের পাশে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

আমেরিকা এই ‘করিডোর’-কে মানবিক ত্রাণ সহায়তার নামে উপস্থাপন করলেও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন—এটি বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলির এই পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন শুধু ঢাকা নয়, দিল্লি, বেইজিং এবং মস্কোও।

ভারতের কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, বাংলাদেশের ভূমিকা পাল্টালে তা ভারতের মিয়ানমার-কেন্দ্রিক সংযোগ ও বিনিয়োগ প্রকল্পে বড় ধাক্কা দিতে পারে। বিশেষ করে, রাখাইনে বিদ্রোহী ‘আরাকান আর্মি’-কে সম্ভাব্য সহায়তা দিলে মিয়ানমারের সেনা সরকার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে—যার প্রভাব ভারতীয় ক্যালাদান প্রকল্পেও পড়তে পারে।

সেনাবাহিনী থেকে সীমান্ত এলাকাকে ‘মিলিটারি অপারেশন জোন’ (MOZ) হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবও এসেছে—যা কার্যকর হলে সীমান্তে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যাবে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে, সীমিত হবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (BGB) দায়িত্ব।

তবে সেনাপ্রধান কিছুদিন আগেই ইউনুসের সঙ্গে বৈঠকে MOZ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। এই দ্বিমতও প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের অংশ হিসেবে উঠে এসেছে।

ভারত এখন অবস্থান নিচ্ছে ‘কৌশলগত সংযম’-এর। তাদের লক্ষ্য, এই সংকটের মধ্যে নিজেদের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে গোয়েন্দা সমন্বয় জোরদার করা।

একজন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকের মন্তব্য অনুযায়ী, “এই সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ যেভাবে একাধিক চাপে পড়েছে, তাতে ভারত চাইছে কৌশলগতভাবে এগোতে। কিন্তু পাশাপাশি তারা নজর রাখছে চীন ও আমেরিকার প্রভাব কতটা বাড়ছে।”

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,400SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks