কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
দক্ষিণ এশিয়ায় আকাশসীমা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনায় উঠে এসেছে এক প্রশ্ন—ভারত যদি পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ বিমান চলাচলের জন্যও আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কী হবে?
সম্প্রতি বাংলাদেশের ভিতরে ভারতের বিরোধিতা করে যেভাবে কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী সক্রিয় হয়েছে, তা নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশের বহু কূটনৈতিক বিশ্লেষক। তাঁদের আশঙ্কা, শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পর দেশজুড়ে যেভাবে ভারত-বিরোধী শক্তির দাপট বেড়েছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে আঞ্চলিক সম্পর্কে—বিশেষত আকাশপথে।
ভারতের এয়ার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক কল্যাণ চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারত। একমাত্র দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। যদি ভারতীয় আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে পশ্চিম দিকে ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ প্রায় অসাধ্য হয়ে উঠবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকেও যেতে হবে বড় ঘুরপথে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমে যেতে হলে বাংলাদেশি বিমানের মিয়ানমার, চীন, তাজিকিস্তান ঘুরে আফগানিস্তান হয়ে যেতে হবে ইউরোপে। এতে সময়, জ্বালানি এবং খরচ—সব কিছুই বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। প্রয়োজনে অন্য দেশে রিফুয়েলিং করতে হবে, যা অনেক বিমানের পক্ষেই আর্থিকভাবে টেকসই নয়।
অপরদিকে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে সমুদ্রপথে উড়ে শ্রীলঙ্কা বা ওমান ঘুরে পশ্চিমে পৌঁছনো কি সম্ভব নয়? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গভীর সমুদ্রপথে কোনো নির্দিষ্ট এয়ার রুট নেই। সেই সব রুট উপকূলঘেঁষা এবং সেখানে বিমানের গতি ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট দেশের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (ATC)। আর ভারতের পাশে সেই দায়িত্ব পালন করে ভারতীয় এটিসি।
যদিও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, হাই-সিতে উড়লে ভারত বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশি বিমানের জন্য গাইডেন্স দিতে পারে, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যদি মাঝসমুদ্রে কোনও জরুরি অবস্থা দেখা দেয়, তাহলে বিমান নামবে কোথায়? ভারতের আকাশ বন্ধ থাকলে সেই বিকল্প তো আর থাকবে না।
অনদিকে বাংলাদেশের কূটনীতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির ফল ভোগ করতে হবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকেই। বিমান চলাচলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যদি দ্বিপাক্ষিক রাজনীতির কারণে বিঘ্নিত হয়, তবে তার প্রভাব পড়বে পর্যটন, আমদানি-রফতানি, ছাত্র ও কর্মজীবী অভিবাসীদের উপরেও।
এক বিশিষ্ট বিশ্লেষকের কথায়, “হাসিনা সরকারের সময়ে যে ভারসাম্যমূলক নীতি ছিল, তা এখন হঠাৎ করে ভেঙে পড়েছে। ভারতের বিরুদ্ধাচরণ করে কিছু কট্টরপন্থী হয়তো রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়, কিন্তু তার খেসারত দেবে গোটা দেশ।”
সর্বোপরি বলা যায় সীমান্তের বাইরে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতায় ভারত যেন অদৃশ্য এক ছায়া। সম্পর্কের ছায়া দীর্ঘ হলে আকাশও মেঘলা হয়। আর সেই মেঘে যদি বজ্র নামে, তার শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়।