কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
নারায়ণপুরের আবুজমদ জঙ্গলে দীর্ঘ লড়াই: বাসবরাজের মৃত্যু !
প্রায় দুইদিন ধরে অব্যাহত থাকা নারায়ণপুরের আবুজমদ বনাঞ্চলে পুলিশ-মাওবাদী সংঘর্ষে বুধবার সকালে বাংলাদেশে তীব্র সঙ্গানের সমাপ্তি ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, এনকাউন্টারে কমপক্ষে ২৫–৩০ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে সিপিআই (মাওবাদী) দলের শীর্ষ কমান্ডার বাসবরাজ (নামবালা কেশব রাও) । এ ঘটনায় একজন পুলিশ জওয়ান আহত হওয়ার পাশাপাশি এক স্থানীয় গাইডের মৃত্যু হয়েছে অস্ত্রোপচারে বহু গুলি ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে AK-47 এবং INSAS রাইফেল সহ স্বয়ংক্রিয় বন্দুক রয়েছে।
পুলিশ গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে দুই দিনের লড়াই শুরু করার প্রস্তুতি নেয়। নারায়ণপুর জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার জানান, সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আবাসস্থল সম্পর্কে তথ্য পেয়ে নারায়ণপুর, দন্তেভাড়া, বিজাপুর ও কন্ডগাঁও জেলার ডিসট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (DRG) একযোগে ছত্রভঙ্গ অভিযান শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী বিশেষ করে কমান্ডার বাসবরাজের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ায় ওই এলাকা ঘিরে কড়াকড়ি বাড়ানো হয়।
বুধবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ DRG দল আবুজমদ বনাঞ্চলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা গুলি চালায় এবং দুটি পক্ষের মধ্যে তীব্র গুলিবিনিময় শুরু হয়।
প্রথম দিনের মধ্যেই গুলিবিনিময়ে আনুমানিক ২৫ জন মাওবাদী নিহত হয় এলাকায় ব্যাপক তল্লাশির সময় বেশ কয়েকটি AK-47, INSAS রাইফেল সহ বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন দুই দিকেরও পতন ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত থাকে এবং শেষ পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা দখল করতে সক্ষম হয়। পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে বসবরাজসহ কয়েকজন উচ্চস্তরের মাওবাদী নিহত হন। নিরাপত্তা বাহিনী এখন এলাকা ঘিরে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানানো হচ্ছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, সংঘর্ষের পর আনুমানিক ২৬ জন মাওবাদীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বিজেপি-বিরোধী সাম্প্রদায়িক হিংসা নির্বাপণ কর্মসূচির প্রতিমন্ত্রী বসবরাজ (নামবালা কেশব রাও) অন্যতম। অন্যান্য নিহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই এনকাউন্টারে একজন জওয়ান আহত হয়েছে এবং এক স্থানীয় গাইড (অ্যাসোসিয়েট) নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ গুলি ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে, যা নিহত মাওবাদীরা ব্যবহার করেছিল।
নামবালা কেশব রাও (উপনাম বাসবরাজ বা বাসবরাজ গাঙ্গন্না) ২০০৫ সালের পর থেকে সিপিআই (মাওবাদী) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলম জেলার অধিবাসী, এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় শিক্ষিত ছিলেন। মাওবাদী আন্দোলনের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান শিকার ছিল। নিরাপত্তা সূত্রে জানা যায়, তিনি ২০০৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপর আলিপিরি হামলার পেছনের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তার গলার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নাকাবন্দি তালিকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা পুরস্কার ছিল। বাসবরাজ বহু বছর ধরে মাওবাদী বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এবং বহু নৃশংস হামলার সঙ্গে তার নাম জড়িত ছিল।
UPDATES :
অভূতপূর্ব সাফল্য! ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ২৭ মাওবাদী, নিহত শীর্ষ নেতা বসবরাজু?
ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চলের গভীর অরণ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর বড়সড় অভিযানে এক ঐতিহাসিক সাফল্য পেল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে, এই অভিযানে নিহতদের মধ্যে ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড মাওবাদী নেতাদের অন্যতম, সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক নম্বালা কেশব রাও ওরফে বসবরাজুরও মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। যদিও পুলিশ এই তথ্য এখনও সরকারি ভাবে নিশ্চিত করেনি।
মঙ্গলবার গভীর রাতে দান্তেওয়াড়া, নারায়ণপুর ও বিজাপুর জেলার সীমান্তবর্তী অভুজমাড় অরণ্যে এই গুলির লড়াই শুরু হয়। অভিযানে অংশ নেয় জেলা রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি)-র একাধিক ইউনিট। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের উপস্থিতির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই বিশেষ অভিযান শুরু হয় দুই দিন আগে।
ডিআরজি, কন্ডাগাঁও, বিজাপুর, নারায়ণপুর ও দান্তেওয়াড়ার যৌথ বাহিনী অভিযানে অংশ নেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ জন মাওবাদীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে মিলেছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ।
রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা বুধবার জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে মাওবাদীদের একাধিক শীর্ষ কমান্ডার রয়েছেন। একজন ডিআরজি সদস্য এই অভিযানে শহিদ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কেউই আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ৬০-এর কোঠায় থাকা নম্বালা কেশব রাও ওরফে বসবরাজু ছিলেন সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক ও সামরিক শাখার প্রধান। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা ছিল। সূত্রের দাবি, মৃতদের মধ্যে তাঁর দেহও রয়েছে। তবে মৃতদেহের শনাক্তকরণ ও ডিএনএ পরীক্ষার আগে সরকারিভাবে কিছুই জানানো হবে না বলে পুলিশের বক্তব্য।
চলতি বছরেই ছত্তিশগড়ে বিভিন্ন জেলায় মোট ২০০ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮৩ জনই নিহত হয়েছেন বস্তার ডিভিশনের চার জেলা—বিজাপুর, নারায়ণপুর, দান্তেওয়াড়া ও কন্ডাগাঁওয়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, এত বিপুল সংখ্যক জঙ্গি নিধনের ঘটনা গত এক দশকে নজিরবিহীন।
পুলিশ জানিয়েছে, গুলির লড়াইয়ের পরে এখনও পর্যন্ত চলেছে তল্লাশি অভিযান। বনের গহীন অঞ্চলে সম্ভাব্য আরও লুকিয়ে থাকা মাওবাদী সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন বাহিনীর সদস্যরা।
ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিরোধী লড়াইয়ে এই সফলতা যে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। বসবরাজুর মৃত্যুর খবর সত্যি হলে, তা হবে সরকারের ‘লাল সন্ত্রাস’ নির্মূল অভিযানে এক যুগান্তকারী অধ্যায়।