কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : কলকাতা :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
শহরের ব্যস্ত সড়কে বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে ফের এক প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক উদ্যোগ নিল কলকাতা পুলিশ। চালকদের দৃষ্টিসীমা বাড়াতে এবার বাসে বসানো হচ্ছে ‘ব্লাইন্ড স্পট মিরর’। তবে শুধু প্রযুক্তির উপরেই নয়, পুলিশ জোর দিচ্ছে চালকদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার দিকেও। প্রযুক্তি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির এই যুগলবন্দি শহরের রাস্তায় এনে দিতে পারে বহুল প্রতীক্ষিত নিরাপত্তা।
ডী সী ট্রাফিক শ্রী ওয়াই এস জগনাথরও এর উদগে ডালহৌসি এলাকা থেকে শুরু হয়েছে এই অভিনব প্রয়াস। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০টি বাসে বসানো হয়েছে ব্লাইন্ড স্পট মিরর। কলকাতা পুলিশের পরিকল্পনা, আগামী এক মাসে শহরের বিভিন্ন রুটের আরও ২৭০টি বাসে এই মিরর সংযুক্ত করা হবে। মোট ২৬টি ট্র্যাফিক গার্ড এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। যদিও প্রাথমিক পর্যায় প্রতিটি গার্ড ১০ টি বাসে এই আয়না লাগায় এবং একটি শিক্ষামূলক শিবিরের আয়োজন করে ।
উল্লেখ্য় এই ব্লাইন্ড স্পট মিরর আসলে উত্তল আয়না (Convex Mirror)। এর বাইরের দিকে বাঁকানো প্রতিফলক পৃষ্ঠ চালকদের পেছনের ও পাশের বিস্তৃত এলাকা দেখতে সাহায্য করে—যা সাধারণ আয়নায় সম্ভব নয়। এই কারণে, বহু বছর ধরেই ট্রাক, বাস ও অন্যান্য বড় যানবাহনে সাইড মিরর হিসেবে উত্তল আয়নার ব্যবহার হয়ে আসছে।
তবে আয়নার জগতে শুধু উত্তল আয়নাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অবতল আয়নাও (Concave Mirror)। বিমানের অবতরণ সহায়ক প্রযুক্তি ‘মিরর ল্যান্ডিং এইড সিস্টেম’-এ অবতল আয়নার ব্যবহার হয়। এছাড়াও বাজার, গুদাম বা সুরক্ষিত এলাকায় নজরদারির জন্য অবতল আয়নার প্রয়োজন হয়—কারণ এটি দূরের বস্তুকে বড় করে স্পষ্ট দেখায়।
অপরদিকে প্রশ্ন থেকে যায় বাস দুর্ঘটনায় আয়নার প্রভাব কতটা? ট্র্যাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শহরের বাস দুর্ঘটনার প্রায় ২৪% ঘটছে ব্লাইন্ড স্পট থেকে আসা যান, পথচারী বা সাইকেল আরোহীকে ঠিকমতো দেখতে না পারার কারণে। এই সমস্যার সমাধানেই এই মিরর বসানোর সিদ্ধান্ত।
একসাথে চোখের আয়নাও জরুরি! শুধু আয়না বসিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে না পুলিশ। সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার শ্রী নীলেশ চৌধুরী বললেন,
“বাস চালকের দৃষ্টি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে তো সমশা থেকই যাবে ,অথেব আয়নার পাশাপসী আমরা চক্ষু পরিখরও ব্যবস্থাও করছি। ইতিমধ্যে ৩০টি বাসের চালকের চোখের পরীক্ষা করানো হয়েছে। আয়নার সঙ্গে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক পদক্ষেপ।”
অন্যদিকে মানবিক প্রশ্নে শিক্ষামূলক উত্তর উঠে আসে টালা পার্ক সংলগ্ন (TRAFICK TRANNING SCHOOL) এ শ্যামবাজার ট্রাফিক গুয়ার্ডের অনুষ্ঠানে ,অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক ট্রেনিং স্কুলের অফিসার ইনচার্জ শ্রী প্রসনজিত চক্রবর্তী। তিনি বাস চালকদের উদ্দেশ্যে একটি ছোট অথচ তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন করেন—
“আপনারা নিজেদের কীভাবে দেখেন?”
চালকদের সরল উত্তর—”আয়নায়।”
চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা—”নিজেকে ঠিকঠাক দেখতে পারাটাই সচেতনতার শুরু। আয়না কেবল বাইরের জগৎ নয়, ভেতরের দৃষ্টিও স্পষ্ট করে।”
সর্বোপরি এটাই বলা বাহুল্য প্রযুক্তির স্পষ্ট প্রতিফলন আর মানুষের মনোযোগ—দুইয়ের সম্মিলনে যদি দুর্ঘটনা কমে, তবে এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আয়নার ভাষায় বললে, দুর্ঘটনার ‘চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া’ হচ্ছে।