কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব সংবাদদাতা :
“হাইকোর্টের রায় মেনে বিক্ষোভের জায়গা বদল, সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি উঠল”
চোখেমুখে ক্লান্তি, হাতে ব্যানার—তবুও মনোবলে একটুও ঘাটতি নেই। চাকরি হারানো শিক্ষক-অশিক্ষকরা আবারও জানিয়ে দিলেন—এই লড়াই থেকে তাঁরা একচুলও পিছোবেন না। এবার তাঁদের লড়াই পৌঁছচ্ছে সংসদের দোরগোড়ায়। রাজ্যের সব সাংসদদের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা, যাতে বিষয়টি সংসদেও আলোচনায় আসে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, শুক্রবার রাতেই বিকাশ ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ সরিয়ে নেওয়া হয়। নতুন জায়গা এখন—সেন্ট্রাল পার্ক লাগোয়া বইমেলার মাঠের সামনের খোলা জায়গা। সেখানেই ‘রোটেশনাল’ পদ্ধতিতে ২০০ জন করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি মিলেছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, “আইনের পথে থেকেই আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে যাব। এখন আমরা নতুন জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে বসব, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
এবারের পরবর্তী কৌশল আরও রাজনৈতিক। রাজ্য ও কেন্দ্র—দু’দিকেই চাপ সৃষ্টি করতে চান আন্দোলনকারীরা। তাই তাঁরা রাজ্যের সব সাংসদদের চিঠি দিচ্ছেন— শাসক হোন বা বিরোধী, প্রত্যেককে। তাঁদের আবেদন,
“আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের জীবন থমকে গেছে। আমরা চাই বিষয়টি সংসদে উঠুক। এবং রাজ্যে যেন একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়—সেখানে আলোচনা হোক, কীভাবে আমাদের চাকরি ফেরানো যায়।”
অপরদিকে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সোমবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না এলে তাঁরা বৃহত্তর কর্মসূচির পথে হাঁটবেন। ইতিমধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আলোচনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের তরফে এক প্রতিনিধি বলেন,
“আমরা ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী একবারও দেখা করেননি। আমরা সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব—আরও বড় আন্দোলনের।”
অন্যদিকে হাইকোর্ট জানিয়েছে, আন্দোলন চলতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধা যাতে না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসনকে বলা হয়েছে জল এবং বায়ো টয়লেটের মতো পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে। সেই সঙ্গে আন্দোলনকারীরাও প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
কয়েক হাজার চাকরি হারানো মানুষের প্রতিধ্বনি যেন এখন গড়িয়েছে আইনসভা ও রাজনীতির গণ্ডির ভিতরে। তাঁদের প্রশ্ন—বিচার পাওয়া কি এত কঠিন? সোমবারের মধ্যে যদি আলো না জ্বলে, তবে এ আন্দোলন আরও দীপ্তি নিয়ে ফিরবে—সে কথাই যেন আগেভাগেই বলে গেল বিকাশ ভবন থেকে সরেও নতুন ঠিকানায় বসে পড়া সেই শ’দুয়েক মানুষের চোখ।