কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব সংবাদদাতা : আগরতলা :
সাফল্য পেল কেন্দ্রীয় প্রাণী বিনিময় প্রকল্প, উত্তর-পূর্বে বাঘ সংরক্ষণে নতুন আশা
ত্রিপুরার সিপাহিজলা চিড়িয়াখানার বাঘবেষ্টনীতে এখন খুশির হাওয়া। ‘তেজল’ নামের এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগ্রেস সম্প্রতি জন্ম দিয়েছে তিনটি সুস্থ ও সবল বাঘের ছানার। এই ঘটনার পরই চিড়িয়াখানার বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল সাত। শুধু সংখ্যা নয়, এই জন্মের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী সংরক্ষণ কাহিনি।
এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘Animal Exchange Program’। এই প্রকল্পের আওতায় উত্তরবঙ্গের বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে বাঘ দম্পতি তেজল ও শেরা-কে গত বছর আনা হয় সিপাহিজলা চিড়িয়াখানায়। লক্ষ্য ছিল— জিনগত বৈচিত্র্য বাড়িয়ে বন্দি অবস্থায় সুষ্ঠু প্রজননের সম্ভাবনা তৈরি করা।
এক বছর কাটতে না কাটতেই সেই উদ্যোগ ফল দিয়েছে। মা হয়েছেন তেজল, জন্ম দিয়েছেন তিনটি সুস্থ ও সক্রিয় শাবককে। এই মুহূর্তে মা ও ছানারা চিড়িয়াখানার বিশেষ পরিচর্যা ঘরে চিকিৎসকদের নজরদারিতে রয়েছে।
এই সাফল্য নিয়ে ত্রিপুরা বন দফতর, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এবং বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা সকলেই উচ্ছ্বসিত। তাঁদের মতে, এটি শুধু প্রাণী প্রজননের ঘটনা নয়, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতে বাঘ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
এই বিনিময় প্রকল্পে ত্রিপুরা তার পক্ষ থেকে সিংহ, ব্ল্যাক বাক হরিণ, স্পেকট্যাকলড বানর এবং চিতা বিড়াল পাঠিয়েছে বেঙ্গল সাফারিতে। পরিবর্তে এসেছে বিভিন্ন পাখি, কিছু হরিণ, ও এই বাঘ জুটি। এই ‘দুই বাংলার’ মধ্যে প্রাণী বিনিময় কার্যত হয়ে উঠেছে আন্তঃরাজ্য সংরক্ষণ মডেলের রোল মডেল।
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন,
“বেঙ্গল সাফারির captive breeding প্রোগ্রাম সারা দেশে এখন অনুকরণীয়। তেজল-শেরার Tripura সফর সফল হয়েছে—এটাই আমাদের সাফল্যের মাপকাঠি।”
বেঙ্গল সাফারির সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ
বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে আজ পর্যন্ত নয়টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ভারতের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে, তেজল ও শেরা তাঁদেরই অন্যতম। নিজস্ব চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে এগারো। তবে এই যাত্রাপথে ব্যথাও রয়েছে—গত বছর হোয়াইট টাইগ্রেস ‘রিকা’-র চারটি শাবক জন্মের পরই মারা যায়।
এই অভিজ্ঞতা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়—বন্দি অবস্থায় প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুকরণে জন্ম দেওয়া সহজ নয়। তবু এই সাফল্যগুলোই দেখিয়ে দেয়, সঠিক পরিকল্পনা, বিজ্ঞাননির্ভর পরিচর্যা ও আন্তঃরাজ্য সহযোগিতায় সংরক্ষণ সম্ভব।
‘তেজল’ ও ‘শেরা’-র এই গল্প যেন কনজারভেশনের নতুন ভাষা শেখাচ্ছে—যেখানে জঙ্গল শুধু রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তঃরাজ্য সহযোগিতার মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে নতুন ভবিষ্যৎ।
জীবন যখন জন্ম নেয়, নতুন সম্ভাবনাও জন্ম নেয়। ত্রিপুরার তিন নতুন বাঘশিশু তাই শুধু প্রাণ নয়, বয়ে আনছে সংরক্ষণের আত্মবিশ্বাস।