কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব প্রতিনিধি :
বলিউড থেকে বাংলা—একাধিক ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ মুকুল দেব আর নেই। রইল শুধু পর্দায় রেখে যাওয়া অসংখ্য চরিত্র।
চলচ্চিত্রের জগতের আরেক চেনা মুখ হারিয়ে গেল নিঃশব্দে। বহু ভাষার সিনেমায় কাজ করা অভিনেতা মুকুল দেব প্রয়াত। শুক্রবার রাতে নয়াদিল্লিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ছিলেন মাত্র ৫৪ বছরের। মৃত্যুকালে পাশে ছিলেন কন্যা সিয়া দেব। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর অবশেষে হার মানলেন জীবনযুদ্ধে। হাসপাতালের আইসিইউ-তে কাটানো কয়েকটা দিন যেন অপেক্ষারই নামান্তর ছিল।
এই খবরে বলিউডের পাশাপাশি টলিউডেও শোকের ছায়া। সহ-অভিনেতা বিনোদ দারা সিং সামাজিক মাধ্যমে প্রথম খবরটি নিশ্চিত করেন। কিন্তু যাঁর প্রতিক্রিয়ার দিকে সবার চোখ ছিল, তিনি হলেন রাহুল দেব—মুকুলের দাদা, সহ অভিনেতা এবং দীর্ঘদিনের সহযাত্রী।
রাহুল নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন—
“আমার ভাই মুকুল শুক্রবার রাতে প্রয়াত হয়েছেন। সিয়া ওর সঙ্গে ছিল। আমাদের পরিবার শোকস্তব্ধ। মুকুল শুধু ভাই ছিল না, বন্ধু, সঙ্গী, ছায়ার মতো একজন।”
আজ বিকেল ৫টায় নয়াদিল্লিতেই সম্পন্ন হয়েছে শেষকৃত্য। উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা।
মুম্বইয়ের বাইরে যাঁরা বাংলা ছবির নিয়মিত দর্শক, তাঁদের কাছেও অচেনা ছিলেন না মুকুল। ২০১১ সালে ‘অভিসন্ধি’ দিয়ে টলিউডে পা রাখেন তিনি, তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায়। এরপর ২০১২-তে জিৎ অভিনীত ‘আওয়ারা’-তে দুর্দান্ত খলনায়ক চরিত্রে নজর কাড়েন।
‘বচ্চন’, ‘সুলতান: দ্য ওয়্যারিয়র’—জিৎ-র সঙ্গে একাধিক ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে। কণ্ঠ, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, আর ঘরানাভিত্তিক অভিনয় তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছিল বাংলা দর্শকদের কাছেও।
মুকুলের কেরিয়ার কেবল বলিউডেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তামিল, তেলুগু, পাঞ্জাবি ছবিতে তিনি পরিচিত নাম। ‘এক খিলাড়ি এক হাসিনা’, ‘সন অফ সর্দার’, ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’—এর মতো জনপ্রিয় ছবিতে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। ‘সন অফ সর্দার ২’-এর শুটিং শেষ হলেও মুক্তির আগেই চলে গেলেন তিনি।
অভিনয় ছিল তাঁর পরিচয়, কিন্তু ব্যক্তি মুকুল ছিলেন আরও গভীর। আত্মীয়রা জানান, ক্যামেরার বাইরেও ছিলেন হাসিখুশি, পরোপকারী, আত্মমগ্ন এক মানুষ। মেয়ের পড়াশোনার জন্য অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতিও নিয়েছিলেন একসময়।আর সেই মেয়েই—সিয়া—আজ বাবার দেহের পাশে দাঁড়িয়ে শেষ বিদায়ে নীরব।
মঞ্চে আলো নিভল, কিন্তু চরিত্র বেঁচে থাকবে পর্দায়। মুকুল দেব চলে গেলেন, রেখে গেলেন এক নিঃশব্দ প্রতিচ্ছবি—যা কেবল অভিনেতা নয়, এক ভালোবাসার মানুষের বিদায়।