কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব প্রতিবেদন :
“নামেই পরিচয়, আর পরিচয়েই ইতিহাস”—পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ এবার সেই পরিচয় রক্ষার লড়াইয়ে নামতে চলেছে আইনি পথে। ‘শ্রীমন্দির’, ‘জগন্নাথ ধাম’, ‘মহাপ্রসাদ’—শ্রদ্ধা আর ঐতিহ্যে গাঁথা এই শব্দগুলির একচেটিয়া স্বত্ব চেয়ে পেটেন্টের জন্য আবেদন করতে চলেছে শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন (SJTA)। উদ্দেশ্য একটাই—ভবিষ্যতে এই শব্দগুলির অবাধ ব্যবহার রোধ করা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র স্থান পুরীর জগন্নাথ মন্দির। বছরের পর বছর ধরে ‘জগন্নাথ ধাম’ নামটি পুরীর সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় নতুন নির্মিত মন্দিরেও ‘জগন্নাথ ধাম’ লেখাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক টানাপোড়েন। আর সেই প্রেক্ষাপটেই এবার নাম সংরক্ষণের পথে প্রশাসন।
SJTA-র প্রশাসনিক প্রধান অরবিন্দ পাধি জানিয়েছেন, “শ্রীক্ষেত্রের পবিত্রতা ও ভগবান জগন্নাথের একান্ত ঐতিহ্য রক্ষায় মন্দির-সংক্রান্ত শব্দগুলির নির্বিচার ব্যবহারে লাগাম টানতেই এই উদ্যোগ।”
সোমবার একটি বৈঠকে শ্রী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘শ্রীমন্দির’, ‘জগন্নাথ ধাম’, ‘মহাপ্রসাদ’, ‘শ্রীক্ষেত্র’, ‘পুরুষোত্তম ধাম’—এই নামগুলির পাশাপাশি ‘শ্রীমন্দির’-এর লোগোও পেটেন্টের আওতায় আনা হবে। কর্তৃপক্ষের অভিমত, শুধুমাত্র পুরীর সঙ্গেই এই নামগুলি সাংস্কৃতিকভাবে এবং ধর্মীয়ভাবে যুক্ত—তা যেন ভবিষ্যতে বিকৃত বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়।
এই পুরো বিতর্কের সূচনাঙ্ক এপ্রিল মাসে, যখন অক্ষয় তৃতীয়ার দিন পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় উদ্বোধন হয় এক নতুন জগন্নাথ মন্দিরের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে শুরু হয় তার যাত্রা। আর মন্দিরের সামনে লেখা হয়—‘জগন্নাথ ধাম’।
এই নিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পুরীর শংকরাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি। এমনকি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ‘জগন্নাথ ধাম’ লেখা অপসারণের অনুরোধও জানানো হয়। যদিও সেই লেখায় আজও কোনও পরিবর্তন হয়নি।
পুরীর গজপতি মহারাজা দিব্যসিংহ দেব এই বিষয়ে বলেছেন, “ভক্তদের আবেগের সঙ্গে জড়িত এই নামগুলি। এগুলি শুধু পুরীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অন্যত্র এই শব্দের ব্যবহার একপ্রকার পবিত্রতাকে কলুষিত করে।”
তিনি আরও জানান, ‘জগন্নাথ ধাম’, ‘শ্রীক্ষেত্র’, ‘নীলাচল ধাম’—এসব নাম শুধু ভৌগোলিক নয়, আবেগ ও সংস্কৃতির চিহ্ন। অতএব, এগুলির সংরক্ষণ জরুরি।
ধর্মের জগতে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার জায়গায় আইন ঢুকলে অনেক সময় জটিলতা বাড়ে। তা সত্ত্বেও, ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে ওঠা মন্দির ও তার সাথে যুক্ত নাম যদি বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তা রোখার পথ কি শুধুই আইনি?
পুরীর শ্রীমন্দির কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। তবে সেই সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি আর কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতির কাঁটা ঘেঁষে হাঁটতে হবে এই আইনি পথে।