spot_img
28.8 C
Kolkata
Monday, June 16, 2025
spot_img

নদিয়ার ধানতলায় গ্রেপ্তার ১০ বাংলাদেশি: প্রশ্ন উঠছে ‘অদৃশ্য সীমানা’র দায় কার ?

কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব প্রতিবেদন :

সীমান্ত শুধু কাঁটাতারেই থেমে থাকে না। মাঝে মাঝে জীবনের কঠিন বাস্তবতায় সীমান্তের অস্তিত্ব ঝাপসা হয়ে যায়। ধানতলার কুলগাছি গ্রামে এমনই এক ‘সীমান্তছায়া’য় ধরা পড়লেন ১০ বাংলাদেশি নাগরিক—যাঁদের জীবনের গল্প শুধু অনুপ্রবেশের খতিয়ান নয়, বরং টিকে থাকার লড়াইয়ের রূঢ় ছবি।

রবিবার রাতে নদিয়ার রানাঘাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত ধানতলা থানার বিশেষ বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়েন এই দশ জন—তাঁদের মধ্যে ছ’জন মহিলা এবং চারজন পুরুষ। গৌরীবাগ সেতুর কাছে গোপনে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা স্বীকার করেন, বছরখানেক আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নদিয়া সেকশন দিয়ে চোরা পথে প্রবেশ করেছিলেন তাঁরা। ভারতীয় দালালদের সাহায্যেই এই প্রবেশ, যারা বিনিময়ে মোটা টাকা নিয়েছিল।

গত এক বছরে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যে। পরিচয়পত্র ছাড়াই কাজ করতেন নির্মাণ, গৃহসহায়িকা, কৃষিশ্রমিক বা ছোট কারখানায়। কিন্তু সাম্প্রতিক নজরদারি কড়া হওয়ায় এবং বিদেশি হিসেবে ধরা পড়ার ভয়ে তাঁরা ফিরে যেতে চেয়েছিলেন নিজের দেশে।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ রবিবার রাতে কুলগাছি গ্রামে হানা দেয়। গ্রামেরই একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন ওই ১০ জন। গ্রেপ্তারের পর সোমবার তাঁদের রানাঘাট আদালতে তোলা হয়। আদালত দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

ধৃতদের নাম—ফারজানা মোল্লা, নজমিন মোল্লা, আদরি মোল্লা, রিক্তা মোল্লা, সাথি মোল্লা, রাবিয়া মোল্লা, শামিম মোল্লা, মুরাদ মোল্লা, ইকবাল মোল্লা ও আজিম মোল্লা।

পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, ধানতলা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই একটি সক্রিয় চোরাপথ। নদিয়া ছাড়াও মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনাতেও এমন অনুপ্রবেশের প্রবণতা বাড়ছে।

এক সিনিয়র পুলিশ কর্তা বলেন, “শুধু অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। আসল সমস্যা এই দালালচক্র। তারা মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কোটি টাকার চক্র চালাচ্ছে। এবার সময় এই নেটওয়ার্ক ধ্বংসের।”

এই ঘটনা আবারও সামনে এনে দিল সীমান্ত এলাকায় মানুষ পাচার ও বেআইনি অভিবাসনের ভয়াবহ বাস্তবতা।
সীমান্ত পেরনোর গল্পগুলো সবসময়ই শুধু ‘আইনি অপরাধ’ নয়, বরং তারা একটা আর্থ-সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিফলন।

বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ চরম দারিদ্র্য, কর্মসংস্থানের অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকি নিয়ে ভারতে ঢোকেন। আর ভারতে থেকে যান চুপিসারে—কারণ এখানে অন্তত একটা দিন কাজ জোটে।

তবে দেশে ফেরার পথও সহজ নয়। আইন জানে না জীবনসংগ্রামের ভাষা। আর এই ভাষার অনুবাদ নেই আদালতের কোর্টরুমে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,400SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks