কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব প্রতিবেদন :
বৃষ্টি মানেই স্বস্তি নয়, কখনও কখনও তা হয়ে দাঁড়ায় আতঙ্কের নাম। চলতি বছর সময়ের আগেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে কেরলে। আর তার সঙ্গেই শুরু হয়েছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটক—ভারতের একাধিক রাজ্য বৃষ্টির দাপটে বিপর্যস্ত। প্রাণহানির খবর মিলেছে ছ’জনের। মুম্বইয়ে গত ১০৭ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে বৃষ্টির পরিমাণ। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে একাধিক রাজ্যে।
শহরের রাস্তাঘাট, রেললাইন, এমনকি নিম্নাঞ্চলের আবাসন এলাকায় হাঁটুপানি। গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইয়ে বৃষ্টি হয়েছে ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি। যা গত এক শতকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
থানে, পালঘর, কোঙ্কন—বৃষ্টি বিপর্যস্ত করেছে এই জেলাগুলোকেও। রাইগড় ও লাতুরে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। পালঘরে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। রত্নাগিরিতে সাইকেল চালিয়ে ব্রিজ পার হওয়ার সময়ে স্রোতে ভেসে গেছেন এক ব্যক্তি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, নদীর জল বইছে বিপদসীমার ওপরে। কিছু জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)-র দল।
মহারাষ্ট্র পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “জলস্তর ক্রমাগত বাড়ছে, ফলে বিপদ বাড়ছে। আজ মঙ্গলবারও মুম্বই ও আশপাশের জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় রেড অ্যালার্ট জারি রাখা হয়েছে।”
কেরলে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ৭৩.৬ মিলিমিটার। রাজ্যের ১১টি জেলায় জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টিজনিত কারণে সেখানে মৃত অন্তত চারজন।
কর্ণাটকের বেলাগাভি জেলায় একটি বাড়ি ধসে মৃত্যু হয়েছে এক তিন বছরের শিশুকন্যার। তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরল—এই তিন রাজ্যেই আগামী পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আইএমডি (ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর)।
গোয়ায় অতিবৃষ্টির জেরে বেশ কিছু এলাকায় ধস নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে।
আবহাওয়া দপ্তরের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার জেরে মূলত উপকূলবর্তী ও পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। কেরলের পর এবার কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
মৌসুমি বায়ুর আগমনকে স্বাভাবিক ভাবে স্বাগত জানালেও, আবহাওয়ার এই অপ্রত্যাশিত উগ্রতা প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই বৃষ্টির এমন চেহারা। অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল জলপাত, হঠাৎ বন্যা, ভাঙন এবং দুর্বল পরিকাঠামো—সব মিলিয়ে দেশজুড়ে তৈরি হচ্ছে এক উদ্বেগজনক চিত্র।
স্বস্তির বৃষ্টি এবার অনেকের কাছেই হয়ে উঠেছে মৃত্যুর দূত। বছর বছর এমন ভয়াবহতা বাড়ছে, আর তাতেই বড় প্রশ্ন উঠে আসছে—জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মাথায় রেখেই কি তৈরি হচ্ছে নগর পরিকল্পনা ও দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা? মুম্বই, কেরল, কর্নাটক—যে রাজ্যেই হোক না কেন, এই বৃষ্টি শুধুই আকাশের নয়, প্রশ্নেরও।