কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা :
এক সময় ‘অতীত’ বলে মনে করা হয়েছিল যাকে, সেই করোনাই ফের ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে নতুন মুখোশ পরে। দেশে ফের হাজারের গণ্ডি ছুঁয়েছে অ্যাক্টিভ করোনা কেস। বাংলাও বাদ নেই—শহর কলকাতায় এক সপ্তাহেই আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন। চিকিৎসাধীন এক শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা—নতুন সংক্রমণের খবরে ফের উদ্বেগের ছায়া স্বাস্থ্য মহলে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে দু’জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন মাত্র ৯ মাসের শিশু, পিকু-তে অক্সিজেন সাপোর্টে চিকিৎসাধীন। অন্যজন, ৫৫ বছরের এক মহিলা, তিনিও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, রয়েছেন আইসোলেশন ওয়ার্ডে।
সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্যভবন থেকে কোনও বিস্তারিত বিবৃতি না এলেও, বেসরকারি হাসপাতাল ও সূত্র বলছে, কলকাতা ও শহরতলিতে নতুন করে সংক্রমিত অন্তত ১৮ জন। বর্তমানে বাংলায় অ্যাক্টিভ কেস ১৩। অ্যাপোলো, পিয়ারলেস, শুশ্রূষা নার্সিংহোমের পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটেও মিলেছে করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট।
তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য—দেশজুড়ে গত এক সপ্তাহে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৫২ জন। বর্তমানে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ১,০০৯। তালিকায় শীর্ষে কেরালা (৪৩০), তারপরে মহারাষ্ট্র (২০৯), দিল্লি (১০৪)। বাংলার স্থান এখন সপ্তম।
চিকিৎসক ও ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। কারণ, নতুন প্রজাতির ভাইরাসগুলি সংক্রমক হলেও ততটা মারাত্মক নয়।
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ ডঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, “নতুন প্রজাতি যেমন NB.1.8.1 বা LF.7—এই ভাইরাসগুলির ‘মারণ ক্ষমতা’ কম। স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন হওয়ায় ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে পারে বটে, কিন্তু ফুসফুসে বড়সড় ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই।”
ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজা ধর বলছেন, “যাঁদের বয়স ষাটের ওপরে বা যাঁদের আগে থেকেই কোমর্বিডিটি আছে, তাঁদের সাবধানে থাকতে হবে। বাকিদের মধ্যে সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরের লক্ষণেই সীমাবদ্ধ হচ্ছে রোগ।”
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কোভিড এখন মৌসুমি রোগের মতো আচরণ করছে। মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই সংক্রমণ ভারতের মতো দেশে নতুন নয়।
তবে টিকাকরণ ও আগের সংক্রমণের ফলে গঠিত প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা মানুষের শরীরে এখনও কার্যকরী রয়েছে বলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
তথ্য বলছে, টেস্টিং বাড়লে পজ়িটিভ কেসও বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক। তবে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এখনও পর্যন্ত পরিকাঠামো যথেষ্ট বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই নতুন করোনা ঢেউ কি সামান্য ঝাপটা হয়ে মিলিয়ে যাবে, নাকি ভবিষ্যতে আবারও দাপট দেখাবে? সময় বলবে। তবে সচেতন থাকাই এখন একমাত্র পথ।