কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
তাঁরা আর শিক্ষক নন, আদালতের রায়ে সেটাই আজ বাস্তব। কিন্তু তাঁরা কি ভবিষ্যতে অন্য কোনও পথে রাজ্য সরকারি চাকরিতে ফিরে আসতে পারেন?
মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা গেল সেই আশার আলো। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য নয়া চাকরির সুযোগ ও আর্থিক ভাতা—এই দুয়ের পথই খুলে দিল রাজ্য সরকার।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বলেন, “একজনেরও চাকরি চলে যাক, তা আমরা চাই না। পরিস্থিতি আইনি হলেও, মানবিকতাকে বিসর্জন দিতে পারি না।”
সেই বার্তাকেই বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, গ্রুপ সি-র ক্ষেত্রে ২,৯৮৯টি শূন্যপদ ও গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে ৫,৪৮৮টি পদে নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। এই পদগুলির জন্য চাকরিহারা কর্মীরাও আবেদন করতে পারবেন।
শুধু চাকরির প্রতিশ্রুতি নয়, চাকরি ফেরার পথ সুগম না হওয়া পর্যন্ত যাতে কর্মীরা বেঁচে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করছে রাজ্য।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভলিহুড অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ইন্টারিম স্কিম’-এর আওতায় আপাতত গ্রুপ সি কর্মীরা পাবেন মাসে ₹২৫,০০০ এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা পাবেন ₹২০,০০০ ভাতা।
এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি বড় সামাজিক বার্তা দিচ্ছে—‘চাকরি গিয়েছে মানেই ভবিষ্যৎ শেষ নয়।’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ইঙ্গিত মিলেছে, শুধু শিক্ষা দপ্তর নয়, তিন-চারটি অন্য দপ্তরেও কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এর জন্য আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
আইনি জটিলতায় সরাসরি পুনর্বহাল সম্ভব না হলেও, বিকল্প পথেই এই কর্মীদের ফের সরকারি ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
২০১৬-র এসএসসি প্যানেল বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের রায় বহু শিক্ষক ও কর্মীর জীবনে অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পুনরায় নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের জন্য আলাদা করে কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা স্পষ্ট করে দিল, “আইনের গণ্ডি মেনেও মানবিকতার পথ খোলা রাখা যায়।”
গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের প্রতিনিধি দল রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে আশার কথা শুনেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এটি শুধুই রাজনৈতিক বার্তা নয়—এই পদক্ষেপগুলি একটা হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের প্রতি প্রশাসনের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
চাকরিহারা হলেও, তাঁরা এখন শুধুই পরিত্যক্ত নন—নবান্ন তাঁদের পাশে আছে, এই বার্তাই হয়তো তাঁদের নতুন করে বাঁচার সাহস দেবে।