কলকাতা টাইমস নিউজ : নিজস্ব প্রতিবেদন : জলপাইগুড়ি :
চোখের সামনেই সন্তানের মৃত্যু। আর কিছুই করতে পারলেন না মা হাতি। নেপুচাপুর চা বাগানের পাশে নালায় আটকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল এক হস্তিশাবক। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের সাক্ষী রইল ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি লাগোয়া বনাঞ্চল। মা হাতির আহাজারিতে কেঁপে উঠল জঙ্গল।
মঙ্গলবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ির আপালচাঁদ রেঞ্জের জঙ্গল থেকে একটি হাতির দল চেল নদী পার হয়ে ফিরছিল লাটাগুড়ির দিকে। সেই দলের সঙ্গেই ছিল একটি দুধের শিশু হাতি। নেপুচাপুর চা বাগানের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সদ্য খোঁড়া একটি কংক্রিট নালায় পড়ে আটকে যায় শাবকটি। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাকে তুলতে পারেনি মা হাতি। শেষমেশ শাবকটির নিথর দেহ পড়ে থাকে নালার জলে। মা হাতি তখনও কিছু বোঝে না—সে কেবল আহাজারি করে, ডাকে—কিন্তু আর সাড়া মেলে না।
পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, এই মৃত্যু এড়ানো যেত। নেপুচাপুর চা বাগানে যে নালাটি তৈরি হয়েছে, তা কোনওরকম সতর্কতা বা র্যাম্প ছাড়াই খোলা অবস্থায় রাখা ছিল। বন দপ্তরের তরফেও হাতির দল চলাচলের সম্ভাব্য রুট চিহ্নিত করে কোনও নজরদারি ছিল না বলে অভিযোগ।
ঘটনার পর বন দপ্তরের কর্মীরা এলেও, স্থানীয়দের বক্তব্য—“ঘটনা ঘটার পর টহল দিয়ে কী হবে?”
এটা প্রথম নয়। গত বছরের নভেম্বরেও ডুয়ার্সের বানাহাট ব্লকের কারবালা চা বাগানে একইরকমভাবে নালায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল একটি হাতিশাবকের। তখনও সন্তানের মৃত্যুতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল মা হাতি। এমনকি বন দপ্তরের গাড়ির উপর হামলা চালায় হাতির দল। বেঁচে যান কর্মীরা, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাড়ি।
পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি স্পষ্ট করছে, এই সমস্যার মূলে রয়েছে চা বাগান এলাকায় হাতি চলাচলের পথ ও অবকাঠামো নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব। পরিবেশবিদরা বলছেন, “হাতিরা তাদের পুরোনো রুট ধরেই চলে। সেই পথে যদি বাধা তৈরি হয়, এমন দুর্ঘটনা ঘটবেই।”
লাটাগুড়ির জঙ্গলের গভীরে এখনও দাঁড়িয়ে মা হাতি। সে জানে না তার শাবক আর নেই। সে কেবল ডাকে—প্রতিধ্বনি ফেরে না। বন দপ্তরের টিম ঘিরে রেখেছে এলাকা, কিন্তু সেই কান্নার ব্যথা ছুঁয়ে যাচ্ছে মানুষকেও।
আরও একবার প্রমাণ হল—মানুষ আর প্রকৃতির সহাবস্থান শুধুই কাগজে লেখা একটি নীতিবাক্য। মাঠে নামলেই তার বাস্তবতা বড় করুণ।