spot_img
35.7 C
Kolkata
Friday, June 13, 2025
spot_img

সবুজ গেল কোথায়? হট মিক্সিং প্লান্টের ধোঁয়ায় দমবন্ধ দুর্গাপুর !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব প্রতিবেদন : দুর্গাপুর

এক সময়ের সবুজে ঘেরা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল যেন আজ সাদা-ধূসর কংক্রিটের শহর। সেই শহরের বুকে আরও এক ছুরির কোপ পড়ল সবুজে—এইবার মোহনবাগান সরণির ধারে শতাধিক গাছ কেটে বসানো হয়েছে এক হট মিক্সিং প্লান্ট। বিটুমিন আর পাথরের ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। পরিবেশ? শব্দটাই যেন এখানে অপ্রাসঙ্গিক।

শতাংশে নেমেছে সবুজ, অথচ উন্নয়নের নামে চলছে নির্বিচারে গাছ নিধনবিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনও শিল্পাঞ্চলে মোট ভূখণ্ডের অন্তত ২৫–৩৩ শতাংশ সবুজ থাকা উচিত। অথচ দুর্গাপুরে তা এখন মাত্র ৮ শতাংশ! এক সময় ছিল ১৪ শতাংশ—সড়ক প্রশস্তিকরণ, বহুতল আবাসন এবং নানা সরকারি প্রকল্পের নামে একের পর এক গাছ কেটে এখন সেই সবুজ হারিয়ে গেছে ইতিহাসে।

গাছ কাটা হলো, আশা ছিল পুনরায় রোপণ হবে—কিন্তু বাস্তবে এল বিষাক্ত ধোঁয়ামোহনবাগান সরণির ধারে বনভূমিতে গাছ কাটতে দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো পরিণত গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগানো হবে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই স্পষ্ট হয়, সেখানে তৈরি হয়েছে একটি হট মিক্সিং প্লান্ট—যেখানে বিটুমিন গলিয়ে তৈরি হচ্ছে রাস্তার উপকরণ।

স্থানীয় বাসিন্দা অভিষেক গড়াই বলেন,
“সকাল-সন্ধ্যা এই প্লান্ট থেকে যে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে, তা চোখে মুখে ঢুকে অসুস্থ করে দিচ্ছে সবাইকে। ওই রাস্তা দিয়ে স্কুলের বাচ্চারা যাতায়াত করে—ওরা কীভাবে শ্বাস নেবে?”  প্রশ্ন অতন্ত গুরুতপূর্ণ  শুধু নেই উত্তর 

অন্যদিকে প্রশ্ন উটছে কার অনুমতিতে বসল এই প্লান্ট? জবাব নেই, দায় এড়াচ্ছেন আধিকারিকরা আবার সূত্র বলছে, জমিটি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের মালিকানাধীন। অনুমতি দিয়েছে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। অথচ ডিএসপির নগর প্রশাসনিক বিভাগের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অরূপ দত্ত চৌধুরী প্রথমে দাবি করেন,
“ওখানে গাছ ছিল না, ফাঁকা জমি ছিল।”
পরে সাংবাদিকদের তাঁর দফতরে আসতে বলেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—দায় এড়াতে কি সত্যিই অসত্য বলছেন এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক?

দূষণ নিয়ে সরব পরিবেশপ্রেমীরা, অন্যদিকে কিন্তু প্রশাসন নিশ্চুপ

পরিবেশ কর্মী ও সমাজকর্মী শুধাজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য,
“আমি নিজে দেখেছি প্লান্টের ধোঁয়া কতটা ভয়ঙ্কর। এটা বন্ধ না করলে শহরের মানুষ কয়েক বছরের মধ্যেই ফুসফুস হাতে নিয়ে ঘুরবেন।”

একই কথা বলছেন কবি ঘোষ, যিনি দুর্গাপুরে দূষণ বিরোধী আন্দোলনের মুখ। তাঁর মতে,
“শহরের বাতাস এখন কার্যত বিষে ভরা। শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটি, পেটের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে লিখিত অভিযোগ করেছি।”

পর্ষদের ‘জানার কথা নয়’, তদন্তের প্রতিশ্রুতি

অবাক করা বিষয়, দুর্গাপুরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকরা প্লান্টের অবস্থান সম্পর্কেও অবগত নন। অরূপ দে নামের এক আধিকারিক বলেন,
“কোন জায়গায় প্লান্ট বসেছে, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

শহরবাসীর প্রশ্ন—এত বড় একটি দূষণ ছড়ানো স্থাপনা গড়ে উঠল, আর সরকারি সংস্থা জানেই না? নাকি না জানার ভান করছেন তাঁরা?

দুর্গাপুরে উন্নয়নের সংজ্ঞা আজ প্রশ্নের মুখে। শতাধিক গাছের বদলে একটিও লাগেনি। তার বদলে এসেছে বিষাক্ত ধোঁয়া। শিশুদের ফুসফুস কি এ উন্নয়নের মূল্য দিতে প্রস্তুত? যদি না হয়, তবে সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার, আওয়াজ তোলার।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,400SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks