কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
জাতীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত সন্ত্রাস এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা—এই তিন অক্ষরেই এ দিন ভাষণ ঘুরিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে তিনি একদিকে যেমন পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেন, অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তুললেন দুর্নীতি, দখলদারি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ।
VIDEO COURTESY : ANI
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিন বার ঢুকেছি ওদের ভূখণ্ডে, প্রয়োজনে আবারও ঢুকব। অপারেশন সিঁদুর শেষ হয়নি।” তাঁর দাবি, সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে ভারতের পদক্ষেপ এখন ‘নির্ভীক ও নিষ্ঠুর’। বক্তব্যে ছিল সাম্প্রতিক পাহেলগাঁও গণহত্যার প্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনার ‘সামরিক জবাব’-এরও ইঙ্গিত।
বাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহে সম্প্রতি সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রসঙ্গ টেনে মোদীর অভিযোগ, “এই রাজ্যের শাসকদল জনগণের প্রতি নির্মম এবং উদাসীন। যারা গরিবের ঘর জ্বালায়, তাদের সঙ্গেই পুলিশের আঁতাত। আইন আদালতকে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।”
শুধু তাই নয়, এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণে বাধা দেওয়ার অভিযোগও তুলে ধরেন তিনি। “২৬,০০০ শিক্ষক নিয়োগ বাতিল হয়েছে, অথচ রাজ্য সরকারের কোন অনুশোচনা নেই। বরং আদালতকে দোষারোপ করছে। গরিবের স্বাস্থ্য, ঘর, সম্মান—সবই বন্ধক পড়েছে কমিশনের কাছে,” বলেন মোদী।
VIDEO COURTESY : ANI
অভিযোগের তালিকায় ছিল তৃণমূল সরকারের ‘প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি’র প্রসঙ্গও। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “বাঙালিকে দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যৎ দিতে হলে, এই দুঃশাসনকে বিদায় জানাতেই হবে। মোদী গ্যারান্টি দিচ্ছে—আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”
সভা মঞ্চ থেকেই মোদী উদ্বোধন করেন একটি সিটি গ্যাস প্রকল্প, যার ফলে বাংলা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ২.৫ লক্ষ বাড়ি ও সংস্থায় পাইপ গ্যাস পৌঁছবে। তাঁর দাবি, “উন্নয়ন মানেই সড়ক, রেল, গ্যাস, পোর্ট—বাংলার অংশগ্রহণ ছাড়া বিকশিত ভারত সম্ভব নয়।”
প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের জবাবে তৃণমূলের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে লেখা হয়: “পাঁচ সংকটের কথা বললেন মোদীজি—তথ্য বলছে, মণিপুর পুড়ছে দুই বছর ধরে, মহিলা নিরাপত্তায় বিজেপির মুখ লজ্জায় নত। চাকরি? নেট-নীট কেলেঙ্কারি আর ৪৫ শতাংশ বেকারত্বই বিজেপির ‘উপহার’। দুর্নীতি? অর্ধেক মন্ত্রিসভা জামিনে। আত্মকেন্দ্রিকতা? ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখে বাংলার গরিবের প্রতি প্রতিহিংসা দেখাচ্ছে কেন্দ্র।”
জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজ্য রাজনীতির এমন মিশ্র বার্তা স্পষ্টতই নির্বাচনী কৌশলের অঙ্গ। একদিকে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিরন্তর আক্রমণ—মোদীর এই দুই ধারা মিলেই ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির বার্তা হয়ে উঠেছিলো , ‘নিরাপত্তা ও সুশাসনের একক দাবিদার আমরা’।