কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :চণ্ডীগড়/ভাটিন্ডা
আলো ছড়ানোর কারখানাই যেন হয়ে উঠল মৃত্যুর কারখানা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাঞ্জাবের মুকতসার সাহিব জেলার একটি বাজি তৈরির ইউনিটে ঘটে গেল ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রাণ গেল কমপক্ষে পাঁচজনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ২৭ জন।
ঘটনাস্থল, মুকতসারের সিংঘেওয়ালা-ফুতুহিওয়ালা গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত একটি দোতলা বাজি কারখানা। নাইট শিফটে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন, হঠাৎই রাত একটা নাগাদ প্রবল শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইউনিটে। মুহূর্তের মধ্যে ভস্মীভূত হয়ে যায় কারখানাটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে, প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। অনেকেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, কেউবা আহতদের টেনে বার করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালান।
“ভোররাতের আগে পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।,” বলেন এক স্থানীয় বাসিন্দা, “যাঁদের বাঁচানো গেল, তাঁরা সম্পূর্ণভাবে অগ্নিদগ্ধ।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, কারখানার মালিক তারসেম সিং, এবং শ্রমিকদের তদারক করছিলেন এক ঠিকাদার, রাজ কুমার, যাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে। ঘটনার পর থেকেই দু’জনেই পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
ঘটনায় গুরুতর জখমদের তড়িঘড়ি ভাটিন্ডা AIIMS হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের অনেকেই উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে আগত পরিযায়ী শ্রমিক।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, কারখানাটির বিস্ফোরক সংক্রান্ত লাইসেন্স ও সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগুন নেভানোর সময় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মুকতসার সাহিব জেলার জেলাশাসক বলেছেন, “প্রাথমিক ভাবে অনুমান, সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুত রাখা হয়েছিল। তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যে শ্রমিকেরা সেদিন রাতে কারখানায় ছিলেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন দিনমজুর। অধিকাংশই কাজ করতেন অস্থায়ী ভিত্তিতে, নিরাপত্তাহীন পরিবেশে। এক বেঁচে যাওয়া শ্রমিক বলেন, “দিনে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি। জীবন চালাতেই এই কাজ নিতে হয়। জানতাম বিপদ আছে, কিন্তু উপায় ছিল না।”
আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ল অবৈধ বা নিয়ন্ত্রণবিহীন বাজি কারখানার কার্যপদ্ধতি। উৎসবের আলোয় যাঁরা আনন্দ দেন, তাঁদের জীবনেই যেন বারবার নেমে আসে দাহজ্বালা। তদন্তের গতি বাড়িয়ে দায়িত্ব নিরূপণের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু ততদিনে নিভে গেছে পাঁচটি জীবন, এবং আরও কতজন যে আজীবনের জন্য ঝলসে গেলেন, তার হিসাব কে রাখে?