কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
লস্কর-ই-তইবার (LeT) কুখ্যাত জঙ্গি নেতা মুজাম্মিল হাসমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সরকার পতনের নেপথ্যে’ লস্করের হাত থাকার কথা ঘোষণা করে কার্যত ভারত ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। পাকিস্তানের গুজরানওয়ালায় এক সভায় দাঁড়িয়ে সে দাবি করেছে, “ভারতকে শিক্ষা দিতেই শেখ হাসিনার পতন ঘটানো হয়েছে।”
এই বক্তব্য শুধু ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড়সড় অশনি সংকেত বলেই মনে করছে কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা মহল।
২৮ মে পাকিস্তানে পাক মার্কাজি মুসলিম লিগের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুজাম্মিল হাসমি প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার পতনের কৃতিত্ব দাবি করে। বলে, “আমরাই হাসিনাকে সরিয়েছি, এবার ভারতকেও শিক্ষা দেব।” উল্লেখ্য, এই দলটিকে পাকিস্তানে লস্করের রাজনৈতিক মুখ হিসেবেই দেখা হয়।
হাসমি আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ জঙ্গি। সে আরও দাবি করেছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জঙ্গিদের মুক্তি দিচ্ছে, লস্করের সহযোগীদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে লস্কর-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)-এর হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় বাংলাদেশের আইন মন্ত্রকের কার্যালয়ে LeT-র বাংলাদেশ ইউনিট প্রধান হারুন ইজহারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল—এই খবর চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
হারুন ইজহার ২০০৯ সালে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। এখন সে আবার সক্রিয়, এবং সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে তার দেখা হওয়া নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
ভারতের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে অন্তত ২০০ জন জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যাঁদের অধিকাংশকেই আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আটক করা হয়েছিল। এতে মনে করা হচ্ছে, বর্তমান প্রশাসন জঙ্গিদের ফিরে আসার রাস্তাই খুলে দিয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এটা শুধু শেখ হাসিনা বা বাংলাদেশ নয়। এটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক সরকার ফেলে দেওয়ার প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি। এই হুমকি গোটা অঞ্চলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।”
ভারত ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে। পাশাপাশি, এই ইস্যু আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলতে চলেছে নয়াদিল্লি। জানা গিয়েছে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসূত্রের বিষয়ে জোরালো তথ্য তুলে ধরবে ভারত।
লস্করের এই উত্থান শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, ভারতের নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার পক্ষেও এক বড় হুমকি। সাম্প্রতিক হামলা, জঙ্গি মুক্তি ও রাজনৈতিক-জঙ্গি মেলবন্ধনকে একসূত্রে গেঁথে দেখলে স্পষ্ট—বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনে চরমপন্থার উত্থান ঘটছে। এর মোকাবিলায় ভারতের পরবর্তী কূটনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ হবে এই লড়াইয়ের অন্যতম চাবিকাঠি।