কলকাতা টাইমস নিউজ : কলকাতা :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
রাজনীতি কখনও কখনও প্রতীকের আশ্রয় নেয়। আর প্রতীক যখন ‘সিঁদুর’— তখন তা শুধু নারী-সম্মানের প্রতীক নয়, হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অস্ত্রও। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে যখন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা উঠল, তখন অনেকেই বুঝে গেলেন— বাংলার ভোট-লড়াইয়ের ঢাক বাজতে শুরু করেছে। তার প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠল— রাজনীতির এই সিঁদুরযুদ্ধ নিছক প্রতীক নয়, বরং গভীর রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে।
পহেলগামের জঙ্গিহানার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার যে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তার নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই অভিযানের গৌরবগাথা বলার পর এবার মোদী এলেন বাংলায়। ‘সিঁদুরখেলার মাটি’ বাংলায় দাঁড়িয়ে তিনি এই প্রতীককেই রূপ দিলেন রাজনৈতিক অস্ত্রে। বললেন, “আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছেছিল ওরা, আমরা সেই সিঁদুরের শক্তিই ফিরিয়ে দিয়েছি।” পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের বার্তার সঙ্গে মোদী জুড়ে দিলেন বাংলার দুর্নীতি, গোষ্ঠী-সংঘর্ষ ও নারী-নির্যাতনের প্রসঙ্গ। এক ঢিলে দুই পাখি।
কিন্তু মমতা কি চুপ করে থাকবেন? থাকেননি। সোজাসুজি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন, “কালই ভোট করান, দেখে নিন বাংলার মাটি কাকে চায়।” আরও বললেন, “আপনি এখন সিঁদুর বেচছেন? মনে রাখবেন, সিঁদুর মায়ের আত্মসম্মান— এটা কেনা-বেচার বস্তু নয়।”
সিঁদুর নিয়ে এই রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে— সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা। বিদেশে ঘুরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের বার্তা দিচ্ছেন তিনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী সেই প্রসঙ্গটিও তুললেন না। এখানেই তৃণমূলের আপত্তি। মমতার বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট: “দেশ কারও একার নয়। ভারতীয় সেনার কৃতিত্ব কেউ হরণ করতে পারে না।”
রাজনীতির এই সিঁদুর যুদ্ধের কেন্দ্রে আসলে রয়েছে দুই নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তারের লড়াই। একদিকে মোদী বিজেপির মুখ, যিনি জাতীয়তাবাদের মোড়কে ভোট বৈতরণী পার করতে চান। অন্যদিকে, মমতা— যিনি ‘বহু ধর্মে, বহু ভাষায়’ বাংলার জেনারেল নির্বাচনের পথে এগোচ্ছেন আত্মবিশ্বাসে।
বস্তুত, ২০২৬-এর ভোট এখনও বছর খানেক দূরে। কিন্তু এ দিনের পর রাজনৈতিক তাপমাত্রা যে দ্রুত বাড়বে— তা নিশ্চিত।
বাংলার মাটি ‘সিঁদুর’ বাঁচাবে, না ‘অপারেশন’কেই বেছে নেবে, তার উত্তর দেবে আগামী বছরের বিধানসভা। তবে এই মুহূর্তে যা স্পষ্ট, তা হল— সিঁদুর এখন আর শুধু বিবাহের চিহ্ন নয়, বাংলার রাজনীতির গেরুয়া-সবুজ যুদ্ধের এক নতুন উপমা।