কলকাতা টাইমস নিউজ : নিজস্ব সংবাদদাতা : জম্মু,
কাশ্মীর অবশেষে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রেলপথে সম্পূর্ণ যুক্ত হতে চলেছে—আর সেই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা হবে আগামী ৬ জুন, কাতরা থেকে বারামুল্লা অভিমুখে ভান্দে ভারত এক্সপ্রেস চালুর মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মা বৈষ্ণো দেবীর আশীর্বাদপীঠ কাতরা থেকেই প্রথম ট্রেনটি পতাকা নেড়ে যাত্রা সূচনা করবেন। এরপর তিনি কাতরা স্টেডিয়ামে এক বিশাল সমাবেশেও ভাষণ দেবেন। কাশ্মীর উপত্যকার প্রতিকূল পরিস্থিতি ও দীর্ঘ প্রকল্পজটের পর অবশেষে ভারতীয় রেলের এই বহু প্রতীক্ষিত প্রয়াস বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
প্রথমে এই ট্রেন চালুর দিন স্থির হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। কিন্তু প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, প্রধানমন্ত্রীর কর্মব্যস্ততা ও পরবর্তীতে পহেলগামের জঙ্গি হামলা ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে সেই সূচি একাধিকবার স্থগিত হয়। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সীমান্তের দু’পারেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছিল। তারই মাঝে সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং সীমান্ত রেলপথের প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে এখন ফের সেই আলোচনায় ফিরে এল কাশ্মীর রেল সংযোগ।
নতুন এই ট্রেনটি কাশ্মীরের উত্তরপ্রান্তের বারামুল্লা থেকে কাতরা পর্যন্ত চলবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের অন্য প্রান্ত থেকে কোনও সরাসরি ট্রেন কাশ্মীর যাবে না। দিল্লি বা কলকাতা থেকে যাত্রীরা কাতরায় পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেন বদল করে কাশ্মীর যেতে পারবেন। পরবর্তী ধাপে জম্মু স্টেশন হয়ে সংযুক্তির পরিকল্পনাও রয়েছে।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই একাধিক ট্রায়াল রান সফল হয়েছে। এমনকি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় শ্রীনগর পর্যন্ত সেনা বহনকারী ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছিল।
উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২৭২ কিমি। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই ২০৯ কিমি রেলপথ চালু হয়েছে ধাপে ধাপে—
-
২০০৯: কাজিগুন্ড-বারামুল্লা (১১৮ কিমি)
-
২০১৩: বানিহাল-কাজিগুন্ড (১৮ কিমি)
-
২০১৪: উধমপুর-কাতরা (২৫ কিমি)
-
২০২৪: বানিহাল-সঙ্গলদান (৪৮.১ কিমি)
এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ₹৪১,০০০ কোটি।
এই রেল সংযোগ শুরু হলে আমরনাথ যাত্রার জন্য অসংখ্য তীর্থযাত্রী কাতরা থেকে সহজেই শ্রীনগরে পৌঁছে যেতে পারবেন। চলতি বছরের যাত্রা শুরু হচ্ছে ৩ জুলাই, শেষ হবে ৯ অগস্ট। সময়মতো যাত্রীদের ভিড় সামাল দিতে বিশেষ ট্রেন চালানোর কথাও ভাবা হচ্ছে, বিশেষ করে বর্ষায় যদি হাইওয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
কাশ্মীর ভারতের আত্মার অংশ। কিন্তু তার সঙ্গে গতিপথের এই সংযুক্তি ছিল অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক ও প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ। এই উদ্বোধন শুধু রেল নয়, এটি একটি নৈতিক বার্তা—কাশ্মীর বিচ্ছিন্ন নয়, সে অনন্য কিন্তু অবিচ্ছেদ্য।