কলকাতা টাইমস নিউজ :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
পহেলগাম হামলার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জম্মু-কাশ্মীর সফর নিছক প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়। এটি একটি দৃশ্যমান বার্তা—দেশবাসীর উদ্দেশ্যে, কাশ্মীরবাসীর উদ্দেশ্যে এবং আন্তর্জাতিক মহলের উদ্দেশ্যে। এই সফর ভারতীয় গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থানের প্রকাশ, আবার একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসকের কৌশলগত আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।
২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকে কাশ্মীর যেন এক নতুন ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে—আইনগত দিক থেকে যেমন, তেমনই রাজনৈতিক বার্তাবাহক হিসেবেও। আর তাই, আজকের দিনে কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রীর পদার্পণ মানে কেবল একটি সফর নয়, এক নতুন ‘ন্যারেটিভ’-এর নির্মাণ।
এবারের সফর সেই ন্যারেটিভকে আবার সামনে আনে—যেখানে কাশ্মীর শুধুমাত্র জঙ্গি হানার ছায়ায় ঢাকা এক ভূখণ্ড নয়, বরং ‘উন্নয়নের অদম্য অভিযান’-এর অংশ।
পহেলগামের নৃশংস হামলার পরেই এই সফর। তাই প্রশ্ন উঠবেই—এই সফর কি জবাব? না কি সাহসিকতার প্রতীক?
আমার মতে, এটি উভয়ই। রাজনৈতিক ব্যাকরণে যাকে বলে “কন্ট্রোলিং দ্য ন্যারেটিভ”—এই সফর তারই বাস্তব প্রয়োগ। দিল্লি বোঝাতে চায়, হামলা তাকে নত করে না, বরং আরও তৎপর করে তোলে। পহেলগাম হামলা ছিল ভয় দেখানোর চেষ্টা। মোদীর সফর সেই ভয়কে ভাঙার বার্তা।
আগামী লোকসভা ভোটে কাশ্মীরের প্রতীকী গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। শান্তি ও উন্নয়ন—এই দুই থিমকে সামনে রেখেই বিজেপি নিজের জাতীয় প্রচারে কাশ্মীরকে রাখতে চায়। এই সফর সেই প্রস্তুতিরই একটি ধাপ। তবে, কৌশলগত ভাবে এই সফর এটাও জানান দেয়—কাশ্মীর এখন শুধুই সুরক্ষা নয়, রাজনৈতিক চর্চারও কেন্দ্রবিন্দু।
যদি মোদী শুধু নিরাপত্তা বৈঠক করেই ফিরে যান, তবে এই সফর অর্ধেক হয়ে রয়ে যাবে। কাশ্মীরের তরুণদের সঙ্গে কথোপকথন, স্থানীয় শিল্প–পর্যটনের রূপরেখা, নতুন প্রকল্পের ঘোষণা—এসবের মধ্যে দিয়েই এই সফরকে অর্থবহ করে তোলা সম্ভব।
কারণ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু বন্দুক দিয়ে হয় না, হয় আস্থা গড়ে। সেই আস্থা গড়াই আসল ‘নির্বাচনী লড়াই’-এর প্রাক-চিত্র।
এই সফর শুধু অতীতের প্রতিক্রিয়া নয়—এ ভবিষ্যতের দিকচিহ্ন। শান্তির প্রস্তাব, নিরাপত্তার বার্তা আর রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস—এই তিনে গাঁথা মোদীর কাশ্মীর সফর আসলে ‘নির্বাচনের আগের রাষ্ট্রীয় অবস্থান’-এর ঘোষণাপত্র।