কলকাতা টাইমস নিউজ : নিজস্ব প্রতিনিধি :
দার্জিলিঙে বদলি রবীন্দ্রনগরের আইসি, নতুন মুখ মহেশতলায়— সাম্প্রতিক পুলিশ রদবদলে উঠে আসছে নানা প্রশ্ন
রাজ্য পুলিশ বিভাগে ফের রদবদল। আপাতভাবে এটি প্রশাসনিক কার্যক্রমেরই অংশ, কিন্তু বদলি হওয়া আধিকারিকদের অবস্থান, পদমর্যাদা ও দায়িত্বপালনের অঞ্চল বিশ্লেষণ করলে প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তাতে প্রশ্ন উঠছে— কেবল দপ্তর বদলের সিদ্ধান্ত, না কি এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর বার্তা?
সূত্র অনুযায়ী, রবীন্দ্রনগর থানার ইন্সপেক্টর ইন চার্জ (আইসি) মুকুল মিয়াকে হঠাৎ করেই বদলি করে পাঠানো হয়েছে দার্জিলিং। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলা, যেখানে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা ও আইনশৃঙ্খলার গুরুত্ব বরাবরই তীব্র— সেখানে এমন এক অভিজ্ঞ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
রবীন্দ্রনগরের মতো দক্ষিণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পুলিশ প্রশাসনে যিনি দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন, তাঁর হঠাৎ উত্তরবঙ্গে স্থানান্তর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলেই। মুকুলবাবুর বদলে মালদার রাতুয়ার সার্কেল ইন্সপেক্টর সুজন কুমার রায় এখন থেকে রবীন্দ্রনগরের নতুন আইসি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
একই সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে মহেশতলার এসডিপিও পদে। বর্তমান এসডিপিও কামরুজ্জামান মোল্লা-কে বদলি করে পাঠানো হয়েছে স্টেট আর্মড পুলিশ (এসএপি)-র তৃতীয় ব্যাটেলিয়ানে সহকারী কমান্ডান্ট পদে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে সৈয়দ রেজাউল কবীর-কে, যিনি এতদিন রাজারহাট থানার আইসি ছিলেন।
পুলিশে এই ধরনের রদবদল সাধারণত হয়ে থাকে প্রতি বছরই। তবে, এই সময় রদবদলের সময়সীমা, বদলি হওয়া জায়গাগুলির ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিচার করলে একে কাকতালীয় বলার জায়গা নেই।
আগামী কয়েক মাসে রাজ্যে একাধিক উপনির্বাচন, এবং ২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচন। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে যেখানে শাসকদলের প্রভাব তীব্র, সেই জায়গায় পুরনো আইসি বা এসডিপিওদের বদলি করে নতুন মুখ বসানো কি সেই ভোট প্রস্তুতির অংশ?
বিশেষত মহেশতলার মতো জায়গা, যা শিল্পাঞ্চলও বটে, যেখানে বাম-তৃণমূলের রাজনৈতিক সংঘর্ষ অতীতে ঘটেছে— সেখানে অভিজ্ঞ এবং “বিশ্বস্ত” আধিকারিক নিয়োগের তাগিদ প্রশাসনের থাকতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকেই।
মুকুল মিয়া দক্ষিণ কলকাতার অত্যন্ত ব্যস্ত থানায় – রবীন্দ্রনগরে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দক্ষতা ও জনসংযোগের সুনাম রয়েছে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, যেখানে সম্প্রতি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে টানাপড়েন বেড়েছে, সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে দক্ষ আধিকারিকদের পাঠানোর প্রয়োজন ছিল বলে সূত্রের দাবি।
সরকারি তরফে এই রদবদলকে ‘রুটিন প্রশাসনিক ব্যবস্থা’ বলে জানানো হয়েছে। তবে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এমন রদবদলে যে রাজনৈতিক বার্তাও নিহিত থাকতে পারে, তা মেনে নিচ্ছেন অনেক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকও। একজন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বদলি নিজে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, কিন্তু একসঙ্গে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যখন নতুন মুখ আসে, তখন নিশ্চয়ই বড় পরিকল্পনা থাকে।”
পুলিশ রদবদল প্রশাসনের নিত্যকার কাজ, কিন্তু কোথায় কাকে বসানো হচ্ছে এবং কে কেন সরিয়ে দেওয়া হল, তার ভিতরে লুকিয়ে থাকে শাসক পক্ষের আগামী কৌশলের ইঙ্গিত। রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা, দার্জিলিং— প্রতিটি জায়গাই ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ভাবে ভিন্ন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই রদবদল ভবিষ্যতের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক গতিপথের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে।