কলকাতা টাইমস নিউজ : নিজস্ব সংবাদদাতা :
“২৬ শতাংশ অনগ্রসর শ্রেণি (এসসি) এবং ৬ শতাংশ আদিবাসী (এসটি)— এঁদের সবাই হিন্দু সমাজের অংশ। তাহলে হিন্দুদের কীভাবে সংখ্যালঘু বলা হচ্ছে?” — এমনই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শান্তিনিকেতনে এক প্রশাসনিক সভায় এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “দেখুন, যারা ২৬ শতাংশ এসসি এবং ৬ শতাংশ এসটি হিসেবে সংরক্ষণ পান, তাঁরা সবাই হিন্দু। এত হিন্দু থাকার পরও দেশজুড়ে একটা প্রচার চালানো হচ্ছে যেন হিন্দুরা বিপন্ন, তারা নাকি সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে! এটা কি বাস্তবতা?”
মমতার এই মন্তব্যের পিছনে যে রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শুরু হয়েছে চর্চা। মুখ্যমন্ত্রী পরোক্ষভাবে বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, “মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, ধর্মীয় মেরুকরণ চলছে। অথচ বাস্তবে সংখ্যালঘু কারা, সেটা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।”
লোকসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের প্রশ্ন ফের তীব্র হচ্ছে। ঠিক এই সময় মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাজনীতির মূল স্রোতে নতুন করে বিতর্কের সঞ্চার করেছে।
রাজনীতিবিদদের মতে, মমতার বক্তব্যে একটি বার্তা রয়েছে— যে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও কিছু রাজনৈতিক দল ‘বিপন্নতা’র আবহ তৈরি করে জনমানসে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই বার্তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার আহ্বান লুকিয়ে রয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, তফসিলি জাতি (SC) ও তফসিলি উপজাতি (ST)-র জন্য আলাদা করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে SC শ্রেণির সংরক্ষণ প্রায় ২৩%-এর কিছু বেশি, এবং ST শ্রেণির সংরক্ষণ ৫.৮%-এর কাছাকাছি। মুখ্যমন্ত্রী যে ‘২৬% ও ৬%’ বলছেন, তা রাউন্ড ফিগার ধরে উল্লেখ।
এই দুই শ্রেণির মানুষ, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে হিন্দু ধর্মের অনুগামী। সেই সূত্র ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই বৃহৎ অংশ তো হিন্দু সমাজেরই অঙ্গ। তাহলে হিন্দুরা সংখ্যালঘু কীভাবে হয়?”
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে কটাক্ষ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এখন হিন্দুদের সংখ্যা মনে করছেন, কিন্তু এতদিন তো তোষণের রাজনীতিই করেছেন।”
তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি— “মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র বাস্তব তথ্য সামনে এনেছেন। জনসংখ্যা আর সংখ্যালঘুত্বের বাস্তব বিভাজন বোঝাতেই এই মন্তব্য।”
ধর্ম, জনসংখ্যা, সংরক্ষণ ও রাজনীতির জটিল মিশেলে এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে আলোড়ন তুলেছে রাজ্যজুড়ে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সংখ্যা ও সংরক্ষণ নিয়ে যেভাবে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে পরবর্তী সময়েও রাজনীতির ময়দানে এই ইস্যু মুখ্য হয়ে উঠবে।