কলকাতা টাইমস নিউজ : বিশেষ সংবাদদাতা :
বিপর্যয়ের ছ’দিন পর দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্স— Cockpit Voice Recorder (CVR)-এরও সন্ধান মিলল এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষে। এর আগে উদ্ধার হয়েছিল Flight Data Recorder (FDR)। দুই ‘ব্ল্যাক বক্স’ এখন তদন্তকারীদের হাতে, ফলে বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার পথে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৭০ জন, যার মধ্যে ২৯ জন ছিলেন মাটিতে— আহমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে সকালবেলা যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরই অনেকেই আগুন ও ধ্বংসস্তূপের শিকার।
লন্ডনগামী AI-171— একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার— রওনা দিয়েছিল আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। কিন্তু উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচ্যুতি ঘটে এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র মেঘানিনগর অঞ্চলের বিজে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, “এক বিকট শব্দ, তারপর আগুন আর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা।”
প্রথমে তদন্তকারী Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB) শুধু FDR উদ্ধার করেছিল। কিন্তু রবিবার CVR-ও হাতে আসায় তদন্তে বড়সড় অগ্রগতি হল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
CVR-এ শেষ ৩০ মিনিটের ককপিট কথোপকথন রেকর্ড থাকে। পাইলটদের মধ্যে কী আলোচনা চলছিল, কোনো যান্ত্রিক গোলযোগের ইঙ্গিত ছিল কি না— এ সব এখন সামনে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখ্য সচিব ডঃ পি কে মিশ্র ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিদর্শন করেন দুর্ঘটনাস্থল ও আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতাল। পরিদর্শনের পরে সার্কিট হাউসে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি তদন্ত ও ত্রাণ কাজের গতি পর্যালোচনা করেন।
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB)-র বিবৃতিতে জানানো হয়, “দুই ব্ল্যাক বক্সই উদ্ধার হয়েছে এবং নিরাপদে সংরক্ষিত রয়েছে।”
তদন্তে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রের National Transportation Safety Board (NTSB)— আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কারণ বোয়িং সংস্থার এই বিমান আমেরিকায় নির্মিত।
সিভিল হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন ডঃ মিশ্র। একইসঙ্গে তিনি যান গান্ধীনগরের ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (FSL)-তে, যেখানে DNA নমুনা মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ চলছে।
ডঃ মিশ্র জানান, “এই দুর্ঘটনা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটি মানবিক বিপর্যয়ও। প্রতিটি পরিবারকে সহায়তা করা আমাদের কর্তব্য।”
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শদাতা তারুণ কাপুর এবং উপসচিব মঙ্গেশ ঘিলডিয়াল-সহ বেশ কয়েকজন পিএমও আধিকারিক এই পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন।
এখন কী পরবর্তী পদক্ষেপ?
• AAIB ও NTSB যৌথভাবে তদন্ত চালাবে।
• FDR ও CVR বিশ্লেষণ করে পাইলট এবং যন্ত্রের শেষ মুহূর্তের পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা যাবে।
• DNA রিপোর্ট-এর ভিত্তিতে পরিচয় নিশ্চিত করে দেহ হস্তান্তর শুরু হবে।
• আর্থিক সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হবে প্রধানমন্ত্রী এবং বিমান মন্ত্রকের নির্দেশে।
এয়ার ইন্ডিয়ার এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ভারতের বিমান পরিষেবার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্সের উদ্ধার নতুন করে আশার আলো জাগালেও, সেই সঙ্গে সামনে আনছে বহু প্রশ্নও— প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা, মানবিক ত্রুটি নাকি অন্য কিছু? উত্তর সময়ই দেবে।