spot_img
22 C
Kolkata
Friday, November 14, 2025
spot_img

এক দশক পর কানাডায় পা রাখলেন মোদি, জি-৭ সম্মেলনে নজরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলানোর বার্তা !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব প্রতিনিধি :

প্রায় এক দশক পর কানাডার মাটিতে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিন-দেশ সফরের দ্বিতীয় ধাপে সাইপ্রাস থেকে সরাসরি কানাডার কানানাস্কিস-এ পৌঁছন তিনি, যেখানে ১৬-১৭ জুন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি-৭ সম্মেলন। কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি-র আমন্ত্রণেই এই সফরে গিয়েছেন মোদি।

ই প্রথম কানাডা সফরেই মোদির লক্ষ্য স্পষ্ট—শুধু আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে ভারতের বক্তব্য রাখা নয়, বরং অতীতে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে উত্তপ্ত হয়েছিল, তার বরফ গলানোরও সূচনা করতে চান তিনি।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে,

“জি-৭ সম্মেলনের আলোচনায় থাকবে জ্বালানি নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি।”

বিশেষত AI ও শক্তি প্রযুক্তির সংযুক্তি—AI-Energy Nexus—এ বিষয়ে মোদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলেই সূত্রের খবর। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনাও থাকবে আলোচনার শীর্ষে।

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্ক কার্নি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত মিলছিল। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, প্রো-খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিহ্জ্জারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে অতীতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ভারত ও কানাডা পরস্পরের ৫ জন করে কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে নেয়।

কিন্তু এবার সেই অতীত ভুলে “পারস্পরিক আস্থা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে” সম্পর্ক পুনর্গঠনের আশাবাদ জানাচ্ছে নয়াদিল্লি। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে জি-৭-এর ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।

ভারত-কানাডা বাণিজ্য ও অভিবাসন সংযোগ

  • ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য হয়েছে ৮.৬ বিলিয়ন ডলারের, যার মধ্যে ভারত রফতানি করেছে ৪.২ বিলিয়ন ও আমদানি করেছে ৪.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।

  • পরিসেবা বাণিজ্য ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার—ভারত রফতানি করেছে ২.৫ বিলিয়ন, আমদানি ১১.৮ বিলিয়ন।

  • কানাডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক ও এনআরআই মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ২.৮ মিলিয়ন, যা কানাডার মোট জনসংখ্যার ৪.৫ শতাংশ।

বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক। যদিও সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির ফলে সে প্রবাহে ভাটা পড়েছে।

জি-৭ সম্মেলনের ৫০তম বর্ষে কানাডা রয়েছে সভাপতি পদে। এই বছরের সম্মেলনে শুধু সদস্য দেশগুলিই নয়, আউটরিচ দেশের অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত এই নিয়ে ১১তম বার আউটরিচ দেশ হিসেবে আমন্ত্রিত। আগেও ২০০৩, ২০০۵, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৯, ২০২১, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২4 সালে অংশ নিয়েছে।

এই বছরের আউটরিচ সেশনে শুধুমাত্র একটি অধিবেশন হবে। ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদি সেখানে বিশ্বজুড়ে চলমান সংকট, উদ্ভাবন ও শান্তির বার্তা তুলে ধরবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এক দশক পর মোদির কানাডা সফর নিঃসন্দেহে প্রতীকী গুরুত্ব বহন করছে। একদিকে আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতের অবস্থান জোরদার করার প্রয়াস, অন্যদিকে অতীতের দ্বিপাক্ষিক জটিলতা সরিয়ে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনার সম্ভাবনা। কানানাস্কিসে যদি আস্থা ও সহমর্মিতার নতুন সুর বেজে ওঠে, তবে তা শুধু দুই দেশের নয়, বিশ্ব কূটনীতির ক্ষেত্রেও একটি ইতিবাচক বার্তা হয়ে উঠবে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks