কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
পহেলগাম জঙ্গি হামলার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া, উদ্বেগ এবং প্রশ্ন উঠলেও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি। এই নীরবতা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা পাঁচটি প্রশ্ন ঘিরে নতুন করে চাপ বাড়াতে চায় তৃণমূল।
সোমবার সকালেই নিজের X হ্যান্ডেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের উদ্দেশে যে পাঁচটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, তা ঘিরে মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় X হ্যান্ডেল থেকে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে তৃণমূল। তাতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়,
“২৪ ঘণ্টা পার, অথচ এখনও কোনও উত্তর নেই। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দেশ অপেক্ষায়।”
কী সেই পাঁচ প্রশ্ন? কী বললেন অভিষেক?
১. জঙ্গিরা কীভাবে ঢুকল ভারতের ভূখণ্ডে?
২. এই সুরক্ষা ব্যর্থতার দায় কার? কে জবাবদিহি করবে?
৩. জঙ্গিরা এখনও জীবিত না মৃত—তাদের অবস্থান কী?
৪. সরকার যদি পেগাসাস ব্যবহার করে বিরোধীদের, সাংবাদিকদের, বিচারপতিদের উপর নজর রাখতে পারে, তাহলে সন্দেহভাজন জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদীদের উপর তা প্রয়োগে বাধা কোথায়?
৫. পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পিছনে কোনও বাণিজ্যিক বা কূটনৈতিক চুক্তি কি লুকানো রয়েছে? তাহলে কেন সরকার মুখ খুলছে না?
এই প্রশ্নগুলি উত্থাপন করে অভিষেক স্পষ্ট করেন, “জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে নীরবতা এক ধরনের দায় এড়ানো।” তাঁর মতে, কেন্দ্রের কাছে জবাবদিহি চাইতেই পারেন দেশের নাগরিকেরা, কারণ “দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত নীতিনির্ধারণে আমজনতার অধিকার রয়েছে স্বচ্ছতা দাবি করার।”
তৃণমূল সাংসদের আরও প্রশ্ন—“যদি আমরা সত্যিই ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে থাকি, তাহলে পহেলগাম হামলার ঠিক পরেই পাকিস্তান কীভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ৪১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেল?” তাঁর মতে, সন্ত্রাসে মদত দেওয়া দেশকে এমন আন্তর্জাতিক সমর্থন কেন্দ্রের কূটনীতির পরাজয় নয় কি?
তিনি আরও জানান, গত ১০ বছরে বিদেশ মন্ত্রকের পিছনে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা। সেই টাকা জনগণের করের টাকাই। তাহলে এই বিপুল অর্থে মন্ত্রক কী অর্জন করল—তাও প্রশ্নের কাঠগড়ায়।
মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল X হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওয় তুলে ধরা হয় অভিষেকের প্রশ্নগুলির স্ক্রিনশট। ভিজ্যুয়াল বার্তায় বলা হয়, “২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তবু কেন্দ্র চুপ। দেশবাসী উত্তর চায়।”
এই বার্তার মাধ্যমে বিরোধী দলটি স্পষ্টতই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে চাইছে—যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতাকেই তারা তুলে ধরছে ব্যর্থতা হিসেবে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বা কোনও মন্ত্রীপদস্থ ব্যক্তি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নগুলির উত্তর দেননি। নয়াদিল্লির রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সরকার বিষয়টিকে হয়তো ‘নিরাপত্তাজনিত স্পর্শকাতর’ আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু বিরোধীরা যে তা সহজে মেনে নেবে না, মঙ্গলবার তৃণমূলের কৌশলেই তা স্পষ্ট।
পহেলগামের জঙ্গি হানায় ৯ জন তীর্থযাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গোটা দেশ শোকস্তব্ধ। তার প্রেক্ষিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পাঁচ প্রশ্ন আজ শুধু তৃণমূল নয়, একাধিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এখন দেখার, কেন্দ্রের তরফে কবে এবং কীভাবে আসে সেই বহুল প্রতীক্ষিত “উত্তর”।




