কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :
পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ে হানিমুন করতে গিয়ে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী। তদন্তে উঠে এসেছে, এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী সোনম। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোনম তাঁর প্রেমিক রাজ এবং তিনজন পেশাদার খুনিকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার, মেঘালয় পুলিশ এই হত্যার রহস্যভেদে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে—অপরাধস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করা হবে।
পূর্ব খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বিবেক শিয়েম জানান, “আজ দুপুর ১২টা নাগাদ অভিযুক্তদের নিয়ে শিলংয়ের সোহরা (চেরাপুঞ্জি) এলাকায় সেই পার্কিং লট এবং গিরিখাতের ধারে যাওয়া হবে, যেখানে রাজাকে হত্যা করা হয়েছিল।” সেখানে ঘটনাস্থলে ঠিক কীভাবে খুন করা হয়েছিল তা তদন্তকারী দল নতুন করে পর্যবেক্ষণ করবে।
ঘটনাটি ঘটে ২৩ মে। রাজা ও সোনম সদ্য বিয়ে করে হানিমুনে শিলংয়ে এসেছিলেন। এরপর থেকেই রাজা নিখোঁজ ছিলেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ২ জুন ওয়েইসাউডং জলপ্রপাত সংলগ্ন একটি গভীর গিরিখাত থেকে রাজার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। এরপর তদন্তের গতি ফের বদলায় ৯ জুন, যখন সোনম প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে আত্মসমর্পণ করেন। একইসঙ্গে তাঁর কথিত প্রেমিক রাজ এবং তিন খুনিকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।
মেঘালয় পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) বর্তমানে এই মামলার তদন্ত করছে। রাজ্যের ডিজিপি এল. নংরাং সাংবাদিকদের বলেন, “একটি নতুন বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই স্ত্রীর মনে এত গভীর বিদ্বেষ কিভাবে জন্মালো—এটাই প্রশ্ন। এই মামলায় একাধিক দিক থেকে তদন্ত চলছে।”
তিনি আরও জানান, “যদিও আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছি, কিন্তু সমস্ত অসমাপ্ত সূত্রগুলোকেও যুক্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনাটি শুধু একটি দাম্পত্য কলহ নয়, এর পেছনে আরও গভীর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।”
তদন্তের স্বার্থে মেঘালয় পুলিশ অসমসহ আরও কয়েকটি রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, খুনের আগে ও পরে অভিযুক্তরা বিভিন্ন রাজ্যে ঘোরাঘুরি করেছে।
এই ঘটনায় দেশজুড়ে নাড়িয়ে দিয়েছে জনমত। বিয়ের পর হানিমুনে গিয়ে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ সাধারণ মানুষ। নেটমাধ্যম থেকে টেলিভিশন, সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে “হানিমুন হত্যাকাণ্ড”। প্রেমের নামে প্রতারণা এবং একটি নিছক আর্থিক বা সম্পর্কের কারণেই কী এমন রক্তাক্ত পরিকল্পনা করা যায়—এ প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র।
এই মামলার তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে একটি ঠান্ডা মাথার ষড়যন্ত্রের ছক। সমাজে বিবাহ এবং পারিবারিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার দরকার দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দোষীরা কেউই পার পাবে না এবং দ্রুত চার্জশিট পেশ করা হবে।




