কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, গুজরাট এবং কেরলের মোট পাঁচটি বিধানসভা আসনে বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোট চলে। মোটের উপর ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৩ জুন ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গ: কালীগঞ্জে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অভিযোগ আর উত্তেজনার আবহ
নদিয়ার কালীগঞ্জ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে ৫টা পর্যন্ত ৬৯.৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। একাধিক বুথে দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছে, ফলে চূড়ান্ত হার আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুজনিত কারণে।
তৃণমূল কংগ্রেস এবার প্রার্থী করেছে তাঁর কন্যা আলিফা আহমেদকে। বিজেপি মনোনীত করেছে আশিস ঘোষকে এবং কংগ্রেসের প্রার্থী কাবিল উদ্দিন শেখ, যাঁকে সিপিএম সমর্থন করছে। কেন্দ্রটিতে ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয় শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে।
ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন হলেও কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে তাদের এক এজেন্টকে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী ১০০ মিটার এলাকার মধ্যে সমস্ত দলীয় প্রতীক ও ব্যানার সরিয়ে ফেলা হয়। ভোটারদের মোবাইল ফোন বুথে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল না; কমিশনের স্বেচ্ছাসেবকরা ফোন রাখার জন্য বিশেষ কাউন্টার চালু করে।
বিজেপি প্রার্থী আশিস ঘোষ অভিযোগ করেন, ভোটকর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল আঙুলে কালি লাগিয়েছেন তৃণমূলের চাপে। যদিও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, কোনও বিধিভঙ্গ হয়নি। জেলা প্রশাসকের কাছে এই অভিযোগের রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
কেরল: নিলাম্বুরে টেক্কা রাজনৈতিক দিক পাল্টাতে পারে
নিলাম্বুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫৯.৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রে লড়াই জমেছে এলডিএফ প্রার্থী এম স্বরাজ, ইউডিএফ প্রার্থী আর্যাদান শৌকত, তৃণমূল সমর্থিত স্বতন্ত্র পিভি আনোয়ার এবং এনডিএ-র মোহন জর্জের মধ্যে।
এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে আনোয়ারের পদত্যাগের ফলে। তিনি এলডিএফ ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন এবং বলেন, বন্যপ্রাণীর আক্রমণ সংক্রান্ত স্থানীয় সমস্যা নিয়ে কোনও শিবিরই যথাযথ মনোযোগ দেয়নি।
গুজরাট: বিজেপির মুকুট পুনরুদ্ধার ও ত্রিমুখী লড়াই
বিশাবদার (জুনাগড়): এখানে ৫টা পর্যন্ত ৫৪.৬১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কাড়ি (মেহসানা): ৫৪.৪৯ শতাংশ ভোট পড়েছে বিকেলে।
বিশাবদার আসনটি ডিসেম্বর ২০২৩-এ খালি হয়েছিল, আম আদমি পার্টির বিধায়ক ভূপেন্দ্র ভায়ানি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায়। বিজেপি প্রার্থী করেছে কিরিট পটেলকে, কংগ্রেস দিয়েছে নীতিন রানপরিয়াকে, এবং আপ মনোনীত করেছে গোপাল ইটালিয়াকে। এই কেন্দ্র ২০০৭ সালের পর থেকে বিজেপির দখলের বাইরে। এবার তারা এই রেকর্ড ভাঙতে মরিয়া।
কাড়ি (তফসিলি জাতিভুক্ত কেন্দ্র): প্রয়াত বিজেপি বিধায়ক কার্সান সোলাঙ্কির মৃত্যুর পর উপনির্বাচন হয়। বিজেপি প্রার্থী রাজেন্দ্র চাভদা, কংগ্রেস প্রাক্তন বিধায়ক রমেশ চাভদা এবং আপ প্রার্থী জগদীশ চাভদা।
এই দুই কেন্দ্রে ভোট উৎসাহিত করতে গুজরাট সরকার ছুটি ঘোষণা করেছিল।
পাঞ্জাব: লুধিয়ানা ওয়েস্টে নিরুত্তাপ লড়াই, ভোট পড়েছে অর্ধেকের কাছাকাছি
লুধিয়ানা ওয়েস্ট কেন্দ্রে, যেখানে জানুয়ারিতে আপ বিধায়ক গুরপ্রীত বাসি গোগীর মৃত্যুতে উপনির্বাচন হয়, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৪৯.০৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এখানে আম আদমি পার্টি প্রার্থী করেছে সঞ্জীব অরোরাকে, যিনি পরিবারের সঙ্গে ভোট দিয়ে মন্দির, গুরদোয়ারা ও দরগা ঘুরে আসেন। কংগ্রেস প্রার্থী ভরত ভূষণ আশু, বিজেপির জীবন গুপ্তা এবং শিরোমণি অকালি দলের পরূপকার সিং ঘুমানও ভোট দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ভোটারদের টুইট করে উৎসাহিত করেন, “ভোট দিন, এই দিনটিকে শুধুই ছুটির দিন ভেবে নেবেন না।”
পাঁচটি কেন্দ্রে মোট ১,৩৫৪টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে ১,৩৫৩টিতে ওয়েবকাস্টিং করা হয়েছে। মোবাইল ফোন রাখার জন্য প্রথমবার আলাদা কাউন্টার রাখা হয় ভোটারদের সুবিধার্থে।
সব চোখ এখন ২৩ জুনের দিকে—কোন আসনে কে জয়ী হন, আর কোন দল কতটা জনসমর্থন ধরে রাখতে পারে, তার অপেক্ষায় রাজ্যবাসী ও রাজনৈতিক মহল।




