কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :
জাতি পরিচয় নিয়ে কর্মক্ষেত্রে হেনস্তা—একবিংশ শতকের কর্পোরেট ভারতে আবারও উঠে এল এমনই এক গুরুতর অভিযোগ। দেশের অন্যতম বেসরকারি বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে জাতিভিত্তিক অপমান ও বৈষম্যের অভিযোগ এনেছেন বেঙ্গালুরু-নিবাসী সংস্থারই এক কর্মী। ঘটনার ভিত্তিতে গুরুগ্রামের একটি থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর।
অভিযোগকারী ৩৫ বছর বয়সি শরন এ, যিনি আদি দ্রাবিড় সম্প্রদায়ভুক্ত (তফসিলি জাতি হিসাবে স্বীকৃত), জানিয়েছেন—চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল একটি অফিস মিটিংয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতন তিন সহকর্মী—তপস দে, মনীষ সাহনী ও ক্যাপ্টেন রাহুল পাটিল—তাঁকে জাতি-সম্পর্কিত অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং প্রকাশ্যে অপমান করেন।
শরনের দাবি,
“এটা কোনো একক ঘটনা নয়। বহুদিন ধরেই আমাকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে জাতিগতভাবে হেনস্তা করা হয়েছে—অযৌক্তিক বেতন কর্তন, অসুস্থতার ছুটি বাতিল, ভ্রমণ-সুবিধা কেড়ে নেওয়া ও কারণবিহীন সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল।”
প্রাথমিকভাবে বেঙ্গালুরু পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন শরন, যা ‘জিরো এফআইআর’ হিসেবে নথিভুক্ত করে ঘটনাস্থল অনুযায়ী স্থানান্তর করা হয় গুরুগ্রামের ডিএলএফ ফেজ-১ থানায়। সেখানেই রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এফআইআর রুজু হয়েছে।
গুরুগ্রাম থানার স্টেশন হাউস অফিসার রাজেশ কুমার জানিয়েছেন,
“আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর রেজিস্টার করেছি। তদন্ত চলছে, সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। আইনি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগ উঠতেই ইন্ডিগোর তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে—
“আমরা কর্মস্থলে বৈষম্য, হেনস্তা বা পক্ষপাতিত্ব কোনওভাবেই বরদাস্ত করি না। সংস্থার নীতিতে জিরো-টলারেন্স নীতি কার্যকর। এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে তদন্তে পুলিশকে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।”
জাতি পরিচয় ঘিরে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ ভারতে নতুন নয়। কিন্তু কর্পোরেট পরিমণ্ডলের মতো আধুনিক, শিক্ষিত ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনা ঘটায় সমাজবিজ্ঞানীদের একাংশ উদ্বিগ্ন।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে,
“শুধু সংস্থার অভ্যন্তরীণ কমিটি বা ‘ethics panel’-এর উপর নির্ভর না করে যখন কোনও কর্মী পুলিশের দ্বারস্থ হন, তখন বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা চরমে পৌঁছেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং দ্রুত ও ন্যায্য তদন্ত একান্ত প্রয়োজন।”
পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইন্ডিগোর সিইও এবং নৈতিকতা কমিটিকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, ফলে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।
যে সময় জাতিগত সংবেদনশীলতা নিয়ে সারা দেশে সচেতনতা বাড়ছে, সেই প্রেক্ষিতে এই মামলার রায় ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।




