কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
পুরীর ধূপমাখা আকাশ, দিগন্তজোড়া ভক্তের ঢল আর ঐতিহ্যের ঘনঘটা—আবার ফিরছে রথযাত্রার মাহেন্দ্রক্ষণ। আগামী ২৭ জুন শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পুরী রথযাত্রা ২০২৫। শতাব্দীপ্রাচীন এই হিন্দু উৎসব ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে পৌঁছেছে। একদিকে ভক্তির আবহ, অন্যদিকে প্রশাসনিক তৎপরতা—দুই মিলিয়ে উৎসব যেন হয়ে উঠেছে এক পবিত্র ও সুশৃঙ্খল জাতীয় উদ্যোগ।
দেবযাত্রার তারিখ ও ধর্মীয় আচার
এই রথযাত্রা শুধুই রাস্তায় রথ টানার উৎসব নয়—এর পেছনে রয়েছে বহু আধ্যাত্মিক পরম্পরা ও গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এবছর রথযাত্রার প্রধান ধর্মীয় পর্বগুলি হলো:
-
স্নানপূর্ণিমা (দেবতাদের স্নান উৎসব): ১২ জুন
-
অনাবাসর (দেবতাদের নির্জনবাস): ১৩–২৬ জুন
-
গুন্ডিচা মার্জনা (মন্দির শুদ্ধি): ২৬ জুন
-
রথযাত্রা: ২৭ জুন
-
হেরা পঞ্চমী (লক্ষ্মীর দর্শন): ১ জুলাই
-
বাহুদা যাত্রা (ফেরার যাত্রা): ৪ জুলাই
-
সোনা বেশ (দেবতাদের স্বর্ণভূষণে সাজানো): ৫ জুলাই
-
নিলাদ্রি বিজয় (মন্দিরে প্রত্যাবর্তন): ৫ জুলাই
এই সময় পুরী পরিণত হয় এক অপার্থিব ধর্মপীঠে—রথের চাকা ঘোরে, ভক্তের কণ্ঠে ওঠে ‘জয় জগন্নাথ’। মহারাজা নিজে সোনার ঝাড়ু হাতে ছেরা পহরা প্রথা পালন করেন—যার তাৎপর্য, “ঈশ্বরের সামনে সবাই সমান।”
লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীকে ঘিরে যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই লক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মজিহি। রোববার তিনি এক উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকে জানিয়েছেন,
“আমাদের একমাত্র লক্ষ্য—একটি নিখুঁত ও সম্পূর্ণ নিরাপদ রথযাত্রা।”
পর্যবেক্ষণ হবে গ্র্যান্ড রোড (প্রধান যাত্রাপথ), যেখানে ড্রোন, সিসিটিভি ক্যামেরা, হেলিকপ্টার এবং কোস্ট গার্ড মোতায়েন থাকবে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, AI প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি চালানো হবে। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা, জরুরি চিকিৎসা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণও মজবুত করা হয়েছে।
ভক্তদের কথা মাথায় রেখে পূর্ব উপকূল রেলওয়ে (ECoR) ঘোষণা করেছে, রথযাত্রা উপলক্ষে ৩৬৫টি বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এই ট্রেনগুলি ওড়িশার বিভিন্ন জেলা যেমন—রাউরকেলা, বিরামিত্রপুর, বালেশ্বর, জগদলপুর, গুনপুর, রায়গড়া থেকে চলবে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সাঁতরাগাছি, ছত্তিশগড়ের গোন্ডিয়া, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকেও বিশেষ ট্রেন চলবে পুরীমুখে।
রেল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“এই ট্রেনগুলি শুধু বৃহৎ পুণ্যার্থী সমাবেশ সামলাবে না, বরং প্রত্যন্ত জেলা থেকেও পুরী পৌঁছনোর পথ সহজ করবে।”
বর্ণাঢ্য রথযাত্রায় হাজার হাজার ভক্ত নিজের হাতে টানেন সুবিশাল কাঠের রথ। বিশ্বাস, এই রথ টানা এক পরম পূণ্যকর্ম, যা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির পাশাপাশি জীবনের মোক্ষের পথও প্রশস্ত করে। এই ভক্তি ও সমাজের মিলনের স্পৃহাই রথযাত্রার মূল মর্ম।
এই রথযাত্রা শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি এক সর্বভারতীয় মিলনক্ষেত্র, যেখানে প্রশাসনের নিষ্ঠা, ধর্মীয় ভক্তি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একসঙ্গে মিশে যায়। রাজ্য ও কেন্দ্রের মিলিত উদ্যোগে এবছরের পুরী রথযাত্রা যেন হয়ে উঠছে আধ্যাত্মিকতা ও আধুনিকতার এক অনন্য উদাহরণ।




