কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ—দুই বাংলার সম্পর্ক শুধুই রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক নয়, বরং তা ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও হৃদয়ের বন্ধনে জড়িত। এই ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পর্ককেই আরও গভীর করতে এবার এগিয়ে এল দুই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
সোমবার দুপুরে নবান্নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হলেন ভারতের জন্য নবনিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। প্রায় ১৫ মিনিটের এই বৈঠক ঘিরে তৈরি হয়েছে এক আন্তরিক কূটনৈতিক আবহ।
সাক্ষাতের পর কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন,
“ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে প্রাচীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তা শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থে নয়—আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আত্মার সেতুবন্ধনের ভিত্তিতে গঠিত।”
তিনি আরও জানান, দুই দেশের সীমান্তবাসী মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন আরও দৃঢ় করার জন্য ভবিষ্যতে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা কাম্য।
সাক্ষাতের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস-কে তাঁর শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ করেন হাই কমিশনারকে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জনগণকেও জানান আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম ভারতের কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন রিয়াজ হামিদুল্লাহ। পশ্চিমবঙ্গকে বেছে নেওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে আরও বলেন,
“বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সামাজিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার দায়িত্ব বাংলার। আমরা চাই এই ঐতিহ্য আগামী দিনে আরও সমৃদ্ধ হোক।”
তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বরাবরই ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন। স্বাধীনতা সংগ্রাম, রবীন্দ্রসংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন কিংবা নদীসঙ্কট—দুই বাংলার ইতিহাস বহুবার একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে তৈরি করেছে এক অনন্য সংহতির অধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ যেন সেই বন্ধনেরই আধুনিক এক প্রকাশ।
এতদিন কূটনৈতিক সৌজন্য বলেই গণ্য হলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিয়াজ হামিদুল্লাহর এই সাক্ষাৎ দুই বাংলার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিল—ভৌগোলিক সীমান্ত থাকলেও মননে, সংস্কৃতিতে, আত্মিক বন্ধনে বাংলা একটাই।




