কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে “গ্লোবাল সাউথ”—আর সেই প্ল্যাটফর্মকে কার্যকর হাতিয়ার করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ সংগ্রহে কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে ২ জুলাই থেকে পাঁচ-দিনের বিদেশ সফরে রওনা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সফরে তিনি যাবেন ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও নামিবিয়া।
এই সফরের কেন্দ্রীয় পর্ব ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরোতে ৬-৭ জুলাই আয়োজিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। এক মাস আগের পাহেলগাম সন্ত্রাস হামলার জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালিয়ে পাকিস্তানে জঙ্গি পরিকাঠামোয় আঘাত হানে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিকস শীর্ষ নেতাদের ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা থাকতে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের সচিব ডম্মু রবি।
রবির ভাষায়—
“সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে ব্রিকস সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কোনও মতপার্থক্য নেই। পাহেলগাম হামলার পর সবাই ভারতের পাশে থেকেছে। ঘোষণা পত্রে এই একতা প্রতিফলিত হবে।”
উল্লেখ্য, ব্রিকস এখন ১০-সদস্য বিশিষ্ট গোষ্ঠী—ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও সদস্য হয়েছে ইরান, ইথিওপিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইজিপ্ট ও ইন্দোনেশিয়া।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে আলোচনা হবে। প্রতিরক্ষা উপকরণ যেমন আকাশ মিসাইল সিস্টেম, গারুড় কামান, কোস্টাল নজরদারি প্রযুক্তি এবং সুরক্ষিত কমিউনিকেশন সিস্টেম কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রাজিল।
আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও নামিবিয়ার সঙ্গে আলোচনায় থাকবে লিথিয়াম, কোবাল্ট, গ্রাফাইট ও ট্যান্টালামের মতো দুর্লভ খনিজ সম্পদের নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়। আর্জেন্টিনায় এরইমধ্যে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা KABIL ও Coal India মিলিতভাবে খনি অনুসন্ধানের চারটি ‘কনসেশন ব্লক’ পেয়েছে।
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। সেই প্রেক্ষাপটে মোদীর উপস্থিতি ভারতীয় নেতৃত্বের গ্লোবাল সাউথে স্থায়ী প্রভাব রাখার বার্তা দেবে বলে মনে করছে দক্ষিণ ব্লক।
ডম্মু রবি বলেন,
“ভারত আগামী বছর ব্রিকস সভাপতিত্ব করবে। তাই এই সফর কেবল সাময়িক কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্ব গঠনের প্রস্তুতি।”
মোদী হচ্ছেন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি তিন দশক পরে ঘানা সফরে যাচ্ছেন। বর্তমানে ভারত-ঘানা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে সিংহভাগ ভারতের সোনা আমদানির মাধ্যমে ঘানার পক্ষে ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
নামিবিয়ায় সফর ঘিরে একটি বড় ঘোষণা হতে চলেছে ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (UPI) ব্যবস্থার আন্তঃ-প্রচলন চুক্তি। এই চুক্তি ভারতের ডিজিটাল অর্থনৈতিক মডেলকে আফ্রিকায় বিস্তার করতে সাহায্য করবে।
আর্জেন্টিনাকে নিয়ে ভারতের আগ্রহ মূলত লিথিয়াম ট্রায়াঙ্গেল (আর্জেন্টিনা, চিলি ও বলিভিয়া) ঘিরে। গত বছর KABIL আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এবার সেই চুক্তির বাস্তবায়ন হবে।
ব্রাজিল সফরে প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হবে জ্বালানি, নবীকরণযোগ্য শক্তি, মহাকাশ ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত সহযোগিতার। বর্তমানে ভারত-ব্রাজিল বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২.২ বিলিয়ন ডলার, যার অধিকাংশই ভারতের অনুকূলে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী সফরকালে ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং নামিবিয়ার সংসদে ভাষণ দেবেন। সফরের প্রতিটি দেশের সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হবে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ:
-
সফরের সময়কাল: ২ জুলাই – ৯ জুলাই, ২০২৫
-
প্রধান কর্মসূচি: ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন, রিও দে জেনেইরো (৬-৭ জুলাই)
-
গুরুত্বপূর্ণ ফোকাস: সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার, খনিজ সম্পদ চুক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি সম্প্রসারণ




