কলকাতা টাইমস নিউজ :
নবনিতা ঘড়াই :
দীর্ঘ জল্পনার অবসান। রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বে এবার বড় রদবদল আসতে চলেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সম্মতিতে রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেতে চলেছেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
দলের শীর্ষ পদে তাঁর আগমনকে ঘিরে যেমন দিল্লি থেকে জেলা পর্যন্ত নানা গুঞ্জন, তেমনই নতুন করে উঁকি দিচ্ছে পুরনো ‘আদি বনাম নব্য’ বিজেপি দ্বন্দ্ব। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শমীক সাফ বার্তা দিলেন —
“আদি-নব্য বিভাজনের সময় ফুরিয়েছে। এখন একসাথে পথ চলার সময়।”
মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে বার্তা ঐক্যের, নিশানা তৃণমূল
সোমবার, বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শমীক বলেন —
“মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে — তারা পরিবর্তন চায়, তারা পরিত্রাণ চায়। তৃণমূল সরকারের বিসর্জন চায়। আর সেই লড়াইয়ে বিজেপি কর্মীদের ঐক্যই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
শমীকের এই মন্তব্যকে অনেকেই দেখছেন একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে, যা দলের অভ্যন্তরের বিভাজন রোধ করার প্রয়াস।
আদি বনাম নব্য বিজেপি: পুরনো বিতর্ক, নতুন ভারসাম্যের চেষ্টা
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য বিজেপিতে ‘আদি’ কর্মীদের সঙ্গে ‘নব্য’ নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে।
-
একদিকে ২০১৪-১৫-১৬ সালে উঠে আসা রাজ্য নেতৃত্ব, যাঁরা শূন্য থেকে সংগঠন গড়ে তুলেছেন।
-
অন্যদিকে তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস ছেড়ে আসা নতুন নেতারা, যাঁদের অনেকেই উচ্চপদে বসেছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে শমীকের মতো একজন ‘আদি’ নেতা, যিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন এবং মিডিয়ার মুখ হিসেবে দীর্ঘদিন রাজ্য বিজেপির কণ্ঠস্বর ছিলেন, তাঁর দায়িত্ব নেওয়া ঐক্যের বার্তা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
দিল্লির নজর ২০২৬, রাজ্যে মেরুকরণ স্পষ্ট
২০২৪-র লোকসভায় রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েও বিজেপির ফল প্রত্যাশিত হয়নি। এরপর থেকেই দিল্লি নেতৃত্ব ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠন পুনর্গঠন ও নেতৃত্বের ভারসাম্য তৈরির রাস্তায় হাঁটছে।
শমীক ভট্টাচার্যকে নিয়ে আসা তারই একটি অংশ। দিল্লির এক সূত্র জানাচ্ছে,
“শমীক ভদ্র, মেপে কথা বলেন, দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্য মুখ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পথে নেমে দলকে গড়ার কাজ তাঁর হাতেই দেওয়া হচ্ছে।”
কে থাকছেন, কে বাদ — নজরে নতুন কমিটি
দলের রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে নতুন রাজ্য কমিটি গঠন।
-
‘আদি’ নেতাদের ঠাঁই দিতে হবে
-
আবার তৃণমূলফেরত ‘নব্য’ নেতাদেরও সামলাতে হবে
এছাড়া, যুব মোর্চা ও মহিলা মোর্চার নেতৃত্বেও বদলের আভাস মিলছে।
শমীকের অভিজ্ঞতা: রাজনীতি, সংসদ ও মিডিয়া দক্ষতায় পূর্ণ
-
ছাত্রজীবনে ABVP-র হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ
-
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে টালিগঞ্জ থেকে লড়াই
-
২০২০ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হন
-
দলে মুখপাত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন
তাঁর এই রাজনৈতিক পরিক্রমা তাঁকে দায়িত্বশীল ও মাটির কাছের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
বঙ্গ বিজেপির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ এখন শুধুই তৃণমূল-বিরোধিতা নয়, নিজেদের ঘর গোছানোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শমীক ভট্টাচার্যের উপর ভরসা রেখে দল যে ঐক্যের পথে হাঁটতে চাইছে, তা স্পষ্ট। তবে আসন্ন ২০২৬-এর যুদ্ধে এই ঐক্য কতটা কার্যকর হয়, এখন সেটাই দেখার।




