কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
উন্নত শহর। নিরাপদ আবাসন। প্রযুক্তিনির্ভর সুরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু তাতেও আটকানো গেল না বর্বরতা। পুণের কন্ডওয়া এলাকায় অভিজাত আবাসনে এক ২২ বছর বয়সি তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে, যিনি নিজেকে কুরিয়ার ডেলিভারি এজেন্ট পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকেছিলেন। শুধু তাই নয়, অপর এক ঘটনায় হাইওয়েতে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। পুণের মতো শহরে দিনে-দুপুরে এই ধরনের ঘটনা প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে।
‘ডেলিভারি’ নাম করে ধর্ষণ, হুমকি দিয়ে পালাল দুষ্কৃতি
ঘটনাটি ঘটে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর, কন্ডওয়ার এক অভিজাত হাউসিং কমপ্লেক্সে। তরুণীর বাড়িতে এসে কুরিয়ার বলে দরজায় দাঁড়ায় এক ব্যক্তি। তরুণী জানান, তিনি কোনও পার্সেল আশা করেননি, তবুও ওই ব্যক্তি নাকি সই নেওয়ার কথা বলে তাঁকে দরজা খুলতে বাধ্য করে। সেই সময়ই অভিযুক্ত তরুণীর মুখে কোনও রাসায়নিক স্প্রে করে অচেতন করে দেয় বলে অভিযোগ।
পরে তরুণীকে ফ্ল্যাটের ভিতর ধর্ষণ করা হয়। এমনকি অভিযুক্ত নিজের সঙ্গে একটি সেলফি তুলে, মেয়েটির ফোনে রেখে যায় একটি ভয়ঙ্কর হুমকির বার্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের মুখ স্পষ্ট ধরা পড়েছে আবাসনের CCTV ক্যামেরায়। এখন তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধিত ধারায় (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা – Bharatiya Nyaya Sanhita) অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ধর্ষণ (ধারা ৬৪), গোপনে ভিডিও তোলা বা যৌন দৃষ্টিকোণ থেকে তাকানো (ধারা ৭৭) এবং ভয় দেখানো বা হুমকি (ধারা ৩৫১(২))-র আওতায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুণে পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান,
“এই ঘটনাটি শুধু নারকীয় নয়, সুরক্ষা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতা। আবাসনে বহিরাগত প্রবেশে যেভাবে শিথিলতা রয়েছে, তা বদলানো জরুরি।”
পুনে হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণ, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লুটপাটও
একের পর এক। ভয়ঙ্কর। সোমবার ভোররাতে পুনের দৌন্ড এলাকায় ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই কিশোরী আরও তিনজন মহিলার সঙ্গে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। রাত ৪.১৫ নাগাদ গাড়ির চালক একটি চা স্টলের পাশে গাড়ি থামান, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। সেই ফাঁকেই দুই দুষ্কৃতী ধারালো অস্ত্র হাতে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে।
চালক গাড়ির বাইরে, আর গাড়ির ভিতরে থাকা চার মহিলাকে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে সোনার গয়না লুট করে দুষ্কৃতীরা। তারপর তাদের মধ্যে একজন ওই নাবালিকাকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, সাইবার ক্রাইম শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এই দুই ভয়াবহ ঘটনায় পুণে শহরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। কুরিয়ার পরিচয়ে এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটে অনায়াস প্রবেশ, অথবা জাতীয় সড়কের পাশে নিরাপত্তাহীনতায় ধর্ষণ—এই দুই ঘটনাই এক গভীর সামাজিক সংকেত বহন করছে।
বিশেষ করে হাই-এন্ড আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভিজিটর ভেরিফিকেশন প্রোটোকল, এবং শহরতলির এলাকায় পেট্রোলিং ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে প্রশাসনকে।
যেখানে নিরাপত্তার দায় বহন করে প্রযুক্তি, সেখানে মানবিক সতর্কতা আর দায়িত্বশীলতা না থাকলে প্রযুক্তিও হার মানে। পুণে শহর দুই নারীর নির্যাতনে আরও একবার আত্মবিশ্বাস হারাল। এখন প্রশ্ন—কে নেবে এই দায়?




