কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
বিহার যেন অপরাধের আবর্তে ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। গোপাল খেমকার খুনের রহস্য এখনও অমীমাংসিত। তার মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় ফের প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হলো এক স্কুলমালিককে। এই ঘটনায় ফের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিধানসভা ভোটের মুখে এ ঘটনা স্বভাবতই নীতীশ কুমার সরকারের জন্য অস্বস্তিকর।
রবিবার সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়। পাটনার খাগৌল এলাকার ডিএভি স্কুল চত্বরে আচমকাই ছুটে আসে একটি মোটরবাইক। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন অজিত কুমার (বয়স প্রায় ৫০), একজন বেসরকারি স্কুলের মালিক ও শিক্ষানুরাগী। আচমকাই বাইক থেকে নেমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন অজিতবাবু। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। আততায়ীরা পালিয়ে যায় দ্রুতগতিতে।
পেশায় শিক্ষাক্ষেত্রের উদ্যোক্তা, অজিত কুমার ছিলেন মুস্তাফাপুর এলাকার বাসিন্দা। বহুদিন ধরেই তিনি খাগৌলে একটি বেসরকারি স্কুল পরিচালনা করতেন। স্থানীয়দের কাছে একজন সম্মানীয় মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর কোনও শত্রুতা বা ব্যবসায়িক বিবাদের খবর মেলেনি এখনও পর্যন্ত।
ঘটনার পর দ্রুত পাটনা সিটি (পশ্চিম) পুলিশ, ফরেন্সিক টিম এবং তদন্তকারী আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এলাকা ঘিরে চলে তল্লাশি, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পাটনা সিটির এসপি ভানু প্রতাপ সিং জানিয়েছেন,
“অজিত কুমারকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। এখনই হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ বলা সম্ভব নয়। আমরা সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখছি।”
পাটনা পুলিশ ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করেছে। আশপাশের সব ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পরপর এমন হাই-প্রোফাইল খুনের ঘটনায় বিহারে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কয়েকদিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন,
“বিহার এখন দেশের ‘ক্রাইম ক্যাপিটাল’। সাধারণ মানুষের কোনও নিরাপত্তা নেই।”
এই খুনের ঘটনা সেই বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে। ভোটের আগে বারবার এমন হত্যাকাণ্ড প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণহীনতাকেই সামনে আনছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
গোটা রাজ্য জুড়ে এখন সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও অনিশ্চয়তা। রাস্তায় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে স্কুলমালিক খুন— এটি শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এক সামাজিক নিরাপত্তার ভাঙন।
প্রশাসনের তরফে যদিও দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের ধরার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তবুও বিহারের ক্রমবর্ধমান অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে— ভয় এখন শুধু ভোটের নয়, জীবনেরও।




