কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি :
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত একজনের দোষ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু গোটা ঘটনার পেছনে বড় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে আরও স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে সিবিআই এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিহতের বাবা-মা। সেই সূত্রেই তাঁদের তরফে বুধবার একটি নতুন আবেদন জানানো হয়েছিল— যাতে তাঁদের আইনজীবীকে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে সিআইডি নয়, সিবিআই তদন্তাধীন এই সংবেদনশীল মামলায় আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল— এমন অনুমতি দেওয়ার কোনও আইনগত ভিত্তি নেই।
আবেগ নয়, বিচার চাই নীতির শৃঙ্খলা:
সিয়ালদহ অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট (ACJM) অরিজিৎ মণ্ডল বলেন, “এই মামলার সঙ্গে জড়িত পরিবারের যন্ত্রণা ও ক্ষোভ আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু আবেগে ভেসে গিয়ে আদালত আইনের সীমা লঙ্ঘন করতে পারে না।”
বিচারক আরও জানান, ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ (Bharatiya Nagarik Suraksha Sanhita) অনুযায়ী এমন কোনও বিধান নেই যা আদালতকে ব্যক্তিগত আইনজীবীকে অপরাধস্থল পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা দেয়।
নিহতের পরিবারের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, আরজি কর হাসপাতালের যে ঘরটিতে মেয়ে চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছিল, সেটি ছাড়া আশপাশের স্থানগুলিতে পৌঁছে পুরো ঘটনাচক্র বিশ্লেষণ করা তাঁদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিচারপ্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে বলে তাঁদের যুক্তি।
তাঁদের আইনজীবী বলেন, “কোনও আইন নেই যা স্পষ্টভাবে আদালতকে এই অনুমতি দিতে নিষেধ করে। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই এই অনুরোধ।”
উল্টোদিকে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “এই মামলায় একাধিক পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে পুনর্তদন্তের আবেদন করেছেন বাদী পক্ষ। বিষয়টি বিচারাধীন। ফলে এখন এই আবেদন অপ্রাসঙ্গিক ও আইনি ভিত্তিহীন।”
সিবিআই যদিও আদালতে এই আবেদনকে সরাসরি বিরোধিতা করেনি।
গত বছর ৯ আগস্ট হাসপাতালের সেমিনার ঘর থেকে এক পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। পরে সিবিআই তদন্তে সঞ্জয় রায়, কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং আদালত তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়।
তবে মামলায় আরও দুই অভিযুক্ত— সন্দীপ ঘোষ (সাবেক অধ্যক্ষ, আরজি কর) এবং অভিজিৎ মণ্ডল (প্রাক্তন ওসি, টালা থানা)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং প্রমাণ লোপাটের তদন্ত এখনও চলছে।
সন্দীপ ঘোষ বর্তমানে একটি দুর্নীতির মামলায় জেলে রয়েছেন, যদিও প্রমাণ লোপাট মামলায় তিনি জামিনে। একই অবস্থা অভিজিৎ মণ্ডলের ক্ষেত্রেও।
বিচারক মন্তব্য করেন, “অপরাধস্থল একটি সংরক্ষিত ক্ষেত্র। সেখানে তদন্তকারী সংস্থার বাইরে কাউকে প্রবেশাধিকার দিলে মামলার প্রমাণ সংগ্রহ ও বিচার বিঘ্নিত হতে পারে।”
এই রায় আদালতের তরফে এমন এক সময় এলো, যখন একদিকে সিবিআই দোষী সাব্যস্ত করেছে একজনকে, অন্যদিকে পরিবার নতুন করে পুরো ষড়যন্ত্রের দাবিতে সত্যের সন্ধান চাইছে।
একদিকে বিচার পেয়েছে পরিবার, আবার অন্যদিকে প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা এখনও অমীমাংসিত। এই অবস্থায় আদালতের এই রায় স্পষ্ট করে দিল— আবেগ নয়, আইনি কাঠামোর ভিতর দিয়েই বিচারিক প্রক্রিয়া চলবে।
এখন সকলের নজর সিবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং কলকাতা হাইকোর্টে চলা পুনর্তদন্তের শুনানির দিকে।




