কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত ডোভাল। নাম করে একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে ডোভালের চ্যালেঞ্জ — যদি সত্যিই ভারতের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে, অন্তত একটি কাচ ভাঙার ছবিও দেখানো হোক।
শুক্রবার চেন্নাইয়ের আইআইটি মাদ্রাজের ৬২তম সমাবর্তনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার শীর্ষস্থানে থাকা এই প্রশাসনিক আধিকারিক সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “তারা বলছে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথায়? অন্তত একটা ছবি দেখান যেখানে দেখা যাবে কাচ ভেঙেছে বা একটি স্ক্র্যাচ পড়েছে!”
ডোভাল বলেন, “নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নামে বিভ্রান্তিকর ছবি ও রিপোর্ট ছড়িয়েছে। এসব ছবিতে শুধু পাকিস্তানের ১৩টি বিমানঘাঁটির ১০ মে’র আগে ও পরের স্যাটেলাইট ইমেজ দেখানো হয়েছে। কোথাও ভারতের ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ নেই।”
তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে পাকিস্তানের সারগোধা, রহিম ইয়ার খান, ও চাকলালার মত ঘাঁটির নাম। ডোভালের কটাক্ষ, “বিদেশি মিডিয়া আসলে আমাদের সাফল্য হজম করতে পারছে না। আমরা যদি চাই, পাকিস্তানের ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারি। অপারেশন সিঁদুর তারই প্রমাণ।”
NSA ডোভালের দাবি, “এটা সীমান্ত সংলগ্ন কোনও আংশিক লড়াই ছিল না। এটা ছিল নির্ভুল পরিকল্পনা ও ভারতীয় প্রযুক্তির সাফল্যের উদাহরণ। আমরা একটাও টার্গেট মিস করিনি, কোনও ভুল বোমা ফেলিনি। এটা আমাদের গর্বের বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই অপারেশনে অধিকাংশ প্রযুক্তি ছিল দেশীয়। রাফাল, সূর্য মিসাইল, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সবই নিজেদের তৈরি অথবা নিজস্ব কন্ট্রোলে। এটা দেখিয়ে দিল ভারত আজ কতটা আত্মনির্ভর।”
পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারত চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’। একযোগে হামলা চালানো হয় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে। ধ্বংস হয় জৈশ-ই-মহম্মদের বাহাওয়ালপুর সদর দপ্তর এবং লস্কর-ই-তৈবার মুরিদকে অবস্থিত মূল ঘাঁটি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করলেও ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৎক্ষণাৎ তা প্রতিহত করে।
এর কিছু সময় পর, ভারত নিজেরাই সরাসরি আক্রমণ চালায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিমানঘাঁটিগুলিতে — যা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার মুখোমুখি পরিস্থিতি তৈরি করে। যদিও আন্তর্জাতিক মহলে ভারতীয় কৌশলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কিছু সংবাদমাধ্যম।
রাজনৈতিক মহলে ডোভালের মন্তব্যকে দেখা হচ্ছে একপ্রকার পালটা কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবেও। যেখানে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও পাকিস্তানের প্রচারব্যবস্থাকে একইসঙ্গে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। এর ফলে সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল আরও ‘আক্রমণাত্মক আত্মরক্ষা’ নীতির দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারত কেবল সীমান্তে প্রতিশোধ নেয়নি, দেশের অভ্যন্তরেও এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বিজয় অর্জনের চেষ্টা করেছে। আর সেই সাফল্যেই জোর দিয়েই NSA ডোভালের বার্তা— “কোনও ভুল হয়নি, কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি — প্রমাণ থাকলে দেখান।”




