কলকাতা টাইমস নিউজ : নিজস্ব প্রতিবেদন :
তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের মিছিল ঘিরে জনজীবনে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কলকাতা হাই কোর্ট কয়েক দিন আগেই কড়া নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশকে। সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করায় এবার প্রশংসার বৃষ্টি। হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এদিন আদালতের কার্যকালেই সরাসরি বলেন, “আমি তো বরাবরই বলি, কলকাতা পুলিশের উপর আমার ভরসা আছে।”
গত শনিবার (১৩ জুলাই), শহিদ দিবসের আগে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল— সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে যেন কোনও যানজট না হয়। তৃণমূলের সভা বা মিছিল যেন সকাল ৮টার আগে বা ১১টার পরে করা হয়। আদালতের ভাষ্য ছিল, মধ্য কলকাতার ব্যস্ততম অফিস টাইমে কোনওভাবেই যানবাহন চলাচল বা সাধারণ মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না।
সোমবার সকালে আদালতে হাজির হয়ে এক আইনজীবী জানান, তিনি নিউ আলিপুর থেকে প্রতিদিন যেমন সময়ে রওনা হন, আজও ঠিক তেমনই বেরিয়েছিলেন এবং কোনও যানজটে না পড়ে ঠিক সময়ে হাই কোর্টে পৌঁছেছেন। বিষয়টি শুনেই বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন,
“রাস্তার পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তাই আবারও বলি— কলকাতা পুলিশকে আমি ভরসা করি।”
বিচারপতির এই মন্তব্য কার্যত একটি ‘সার্টিফিকেট’ বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
তবে একদিকে পুলিশের দায়িত্বশীলতা প্রশংসিত হলেও, অন্যদিকে আদালতের কার্যক্রমে আইনজীবীদের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি।
সোমবার এজলাস কার্যত শূন্য থাকার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন—
“আপনারা কাজের জায়গা নষ্ট করছেন। আজ রাস্তার যা অবস্থা, সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে কোর্টে পৌঁছনো যায় না— এটা আমি বিশ্বাস করি না।”
উল্লেখ্য, এদিন বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয়, যাতে কোনও মামলায় এক পক্ষ অনুপস্থিত থাকলেও আদালত একতরফা রায় না দেন। সেই প্রসঙ্গেই আদালতের তরফে ক্ষোভ ঝরে পড়ে।
এই পরিস্থিতিতে আদালতের বার্তা দ্ব্যর্থহীন— প্রশাসনিক কর্তব্য পালন যথাযথ হলে তা স্বীকৃতি পায়, আবার বিচারব্যবস্থার গতি বাধাগ্রস্ত হলে তা রেয়াত করা হয় না।
যেখানে প্রশাসনের প্রতি আস্থা দেখিয়ে বিচারপতি বলছেন,
“পুলিশের কাজের প্রতি আমার আস্থা আছে,”
সেখানে আইনজীবীদের উদ্দেশে তাঁর খোলা বার্তা—
“কাজে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে রাস্তা বা ট্রাফিককে দোষ দেওয়া মেনে নেওয়া যাবে না।”
২১ জুলাইয়ের প্রাক্কালে কলকাতা শহরের পরিবহণ ও জনজীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকায় খুশি বিচারব্যবস্থা। কিন্তু একইসঙ্গে আদালতের প্রাঙ্গণে দায়িত্বশীল আচরণের অভাব নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ পেল। সবমিলিয়ে, সোমবারের আদালত কক্ষ যেন হয়ে উঠল এক পক্ষকে স্বীকৃতি ও অন্য পক্ষকে সতর্কবার্তা দেওয়ার মঞ্চ।




