কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :
কাশ্মীরের পহেলগামে বিএসএফ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও জঙ্গি হামলা— প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দপ্তর। বুধবার সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে সরাসরি অমিত শাহকে ভারতের ‘সবচেয়ে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ বলে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
লোকসভায় মঙ্গলবার ও রাজ্যসভায় বুধবার পহেলগাম হামলা নিয়ে উত্তাল আলোচনার মধ্যেই অভিষেকের অভিযোগ, ‘‘বিএসএফ, সিআইএসএফ— সব কেন্দ্রীয় বাহিনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনেই। তা সত্ত্বেও সীমান্ত দিয়ে একের পর এক অনুপ্রবেশ, গোরু ও কয়লা পাচার, এমনকি জঙ্গি হানা— সবই ঘটে চলেছে শাহ-জমানায়। এমন ব্যর্থতা স্বীকার করে তাঁর এখনই ইস্তফা দেওয়া উচিত।’’
পহেলগামে চার জঙ্গির হামলার প্রেক্ষিতে অভিষেকের প্রশ্ন, “বিএসএফ কি তৃণমূল কংগ্রেসের অধীনে? চার জন জঙ্গি ঢুকল কেমন করে? গোরু কি পিঁপড়ে, মাছি, মশা? বিএসএফ-এর নজরদারি ছাড়িয়ে এতগুলো গোরু সীমান্ত পার হয় কীভাবে? কে দায়ী?”
তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি বারবার আমাকে তলব করেছে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে তদন্ত চললেও বিএসএফ বা সিআইএসএফের কাউকে কি ইডি বা সিবিআই তলব করেছে? এই পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত কেন?”
কয়লা পাচার প্রসঙ্গেও অভিষেকের তির, ‘‘কোলিয়ারি পাহারা দেয় সিআইএসএফ। তাহলে পাচার কীভাবে হয়? কোনও কমান্ড্যান্টকে কি ডাকা হয়েছে? সিআইএসএফের ডিজিকে কি সিবিআই তলব করেছে?’’
তিনি সাফ জানিয়েছেন, “বাংলা থেকে গোরু পাচারের দায় যদি তৃণমূলের হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে না কেন? টাকা কোথায় যায়, কারা পায়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কি দায় এড়াতে পারে?”
অভিষেকের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর জবাব, ‘‘হিলি সীমান্তে গেছেন উনি? রাজ্য সরকার জমি দেয়নি বলে কাঁটাতারের বেড়া হয়নি। কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধায়ও একই পরিস্থিতি। রাজ্য দায় এড়াতে পারে না।’’
বিজেপির চিরাচরিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে পাল্টা দিয়ে অভিষেক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কালিমালিপ্ত করতেই বিজেপি এই প্রচার করে। কিন্তু সীমান্ত পার করে ঢুকছে কে? জম্মু-কাশ্মীরের সীমান্ত কার আওতায়? সেখানকার পুলিশ কার অধীনে?”
অভিষেকের যুক্তি, “বিএসএফ ও সিআইএসএফ-এর মতো বাহিনী যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আওতায়, তখন এই লাগাতার নিরাপত্তা ভাঙন, অনুপ্রবেশ ও পাচারের দায় একমাত্র কেন্দ্রই এড়াতে পারে না। বিজেপি শুধু তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দায় সারে, নিজেদের দায়িত্ব নিতে চায় না।”
এক কোথায় বলাযায় এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বনাম বিজেপির কেন্দ্রবিরোধী সুর, সীমান্ত নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংঘাত নতুন মাত্রা পেল। পহেলগাম হামলার তদন্ত যত এগোবে, ততই এই বিতর্ক ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা।




