spot_img
22 C
Kolkata
Friday, November 14, 2025
spot_img

“কার্গিলে দাদা লড়েছিলেন, আর ভাইকে মাঝরাতে বাংলাদেশি বলে হেনস্থা!”— পুনেতে চরমপন্থী হানায় তীব্র বিতর্ক !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব প্রতিবেদন : 

কার্গিল যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনার জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে লড়েছিলেন দাদা। আর আজ, ২৫ বছর পরে, নিজের বাড়িতে মাঝরাতে হানা দিয়ে ভাইকে সন্দেহ করা হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিক বলে! ঘটনাটি পুনের চন্দননগর এলাকার। অভিযোগ, হিন্দুত্ববাদী এক চরমপন্থী সংগঠনের অন্তত ৮০ জন সদস্য মধ্যরাতে হানা দেন ওই পরিবারে। জোর করে দাবি করেন— “ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হবে।”

ভুক্তভোগী ইরশাদ শেখ বলেন, “আমার দাদা হাকিমুদ্দিন শেখ ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আমি এবং আমার পরিবার গত ৬০ বছর ধরে পুনেতে বাস করছি। আমাদের আদি বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। আমার দুই কাকাও ছিলেন ভারতীয় সেনার কর্মী। তবুও আমাদের মাঝরাতে বাংলাদেশি সন্দেহে প্রশ্ন করা হলো!”

ইরশাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই রাতে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে একদল লোক হাজির হন। তারা সোজা বলে, “তোমরা বাংলাদেশি। আধার কার্ড দেখাও।”

ইরশাদ জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী তাদের আধার কার্ড দেখান। কিন্তু তাতেও সন্দেহ যায় না। দলের সদস্যরা দাবি করেন— “এটা নকল আধার।” এরপর স্ত্রী ও সন্তানদের পরিচয়পত্র দেখতে জোরাজুরি শুরু হয়। ইরশাদ বলেন, “ছোট ছেলেমেয়েদের ঘুম ভেঙে কান্নাকাটি শুরু হয়। আমার স্ত্রী আতঙ্কে জড়সড় হয়ে যায়। এটা কি কোনও সভ্য দেশে হতে পারে?”

চরমপন্থী দলের সেই দলে উপস্থিত ছিলেন দুই ব্যক্তি, যারা নিজেদের “পুলিশ” বলে পরিচয় দেন। ইরশাদের দাবি, “ওনারাও কাগজ চাওয়ার নামে হুমকি দেন। পরে যখন দেখা যায় আমাদের সব নথিই সঠিক, তখন তাঁরা বলেন, ‘এ নিয়ে যেন হেনস্থার অভিযোগ না তোলেন।’”

তবে ইরশাদ অভিযোগ দায়ের করেন পুনে পুলিশে। কিন্তু তাতেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে তাঁর অভিযোগ। “আমি দেশের সেনাবাহিনীতে পরিবার দিয়ে দিয়েছি। তবুও কি আমরা প্রমাণ করতে থাকব যে আমরা ভারতীয়?”

এই ঘটনা এমন এক সময় ঘটল যখন দেশের নানা প্রান্তে ‘নাগরিকত্ব’ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। NRC এবং CAA নিয়ে দেশজুড়ে আশঙ্কা ও বিভাজনের আবহে এই ধরনের ঘটনাকে অনেকেই “ছদ্ম-দেশভক্তির নামে নিরীহদের অপমান” বলে অভিহিত করছেন।

নাগরিকত্ব সন্দেহ না কি পরিচয় রাজনীতি?

এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের একাংশ প্রশ্ন তুলছে—

  • ভারতীয় সেনার পরিবার হওয়া সত্ত্বেও যদি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে সাধারণ মুসলমান বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা কোথায়?

  • এই ধরনের হানার পেছনে প্রশাসনিক মদত রয়েছে কি না?

  • পুলিশ কি আসলেই নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে?

কার্গিল যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন সেনার ভাইয়ের বাড়িতে, তার পরিবারকে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে পরিচয় প্রমাণ করতে বাধ্য করা হলে— সেটা শুধুই একটি পরিবারের অপমান নয়, পুরো দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন। ইরশাদদের মতো পরিবারের সঙ্গে এমন ব্যবহার কি দেশের প্রজাতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে না ? উঠছে প্রশ্ন ।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks