কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
গুজরাটের আমরেলি জেলায় মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে মৃত্যু হয়েছে তিনটি সিংহ শাবকের। বন দপ্তর এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। ২০১৮ সালের ক্যানাইন ডিসটেম্পার ভাইরাস সংক্রমণের পর একসঙ্গে এত শাবকের মৃত্যু বন দপ্তরের কর্তাদের মনে আবার সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। ওই সময় মারা গিয়েছিল ১১টি সিংহ।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের ২৮ তারিখে দুটি ও ৩০ জুলাই আরও একটি সিংহ শাবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় আমরেলির জ়াফরাবাদ তালুকের কাগেভাদর গ্রামের সংলগ্ন এলাকা থেকে। শাবকগুলির বয়স আনুমানিক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। তাদের মা শাবকদের ফেলে চলে গিয়েছিল— এমনই দাবি স্থানীয় বন কর্মীদের।
বন বিভাগের ডেপুটি কনজ়ারভেটর ধনঞ্জয় সাধু জানান, ‘‘জ়াফরাবাদ থেকে উদ্ধার করার পর শাবক দুটিকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নিউমোনিয়া এবং অতিরিক্ত দুর্বলতার জেরে মৃত্যু হয় তাদের।’’
শাবকদের মৃত্যুতে প্রাথমিকভাবে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে আমরেলির বনাঞ্চলে থাকা বাকি ৯টি সিংহকে (তিনটি সিংহী ও ছয়টি শাবক) আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
জুনাগড় থেকে একটি অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসক দলের উপস্থিতিতে সমস্ত সিংহের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ চলছে বলে বনমন্ত্রী মুলুভাই বেরা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না, তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।”
ফিরে দেখা ২০১৮: যখন এক ঝড়ে মারা যায় ১১ সিংহ
গুজরাটের সিংহদের মৃত্যু নতুন নয়। ২০১৮ সালে গির অরণ্য এলাকায় ক্যানাইন ডিসটেম্পার ভাইরাস (CDV) ও প্রোটোজোয়াল সংক্রমণে মারা যায় একাধিক সিংহ। CDV একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস যা কুকুর, শেয়াল ও বড় বিড়ালদের সংক্রমিত করে। সেসময় রাজ্য ও জাতীয় স্তরে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল, কারণ এশিয়াটিক সিংহরা গির অরণ্যের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে— যেটা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শাবকরা যদি আগে থেকেই মায়ের সঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তবে দুর্বলতা ও ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা তাদের দ্রুত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু একের পর এক মৃত্যু এবং আগের সংক্রমণের ইতিহাস মাথায় রেখে গুজরাট বন দপ্তর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
গুজরাটের গির অরণ্য ও আশপাশের বনাঞ্চলে এখন প্রায় ৬৭৪টি এশিয়াটিক সিংহ রয়েছে (২০২০ সালের জনগণনা অনুযায়ী)। সংখ্যায় সীমিত এই প্রজাতির সংরক্ষণে কোনও গাফিলতি মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে শুধু সংক্রমণ ঠেকানো নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সুসংগঠিত সতর্কতা ও দ্রুত সাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা থাকা বন দপ্তরের জন্য অপরিহার্য।
সিংহ শাবকদের এই রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ এখনো অজানা। তবে সতর্কতা আর নির্ভুল পদক্ষেপেই আটকানো যেতে পারে ভবিষ্যতের বিপদ। ২০১৮-র অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কি সময়মতো রক্ষা করা যাবে ভারতের এই গর্ব, গিরের সিংহদের?




