কলকাতা টাইমস নিউজ : আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা : মস্কো,২২ অগস্ট:
ভারত–রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার করলেন দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বিদেশমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। বাণিজ্য ঘাটতি, জ্বালানি সহযোগিতা, সন্ত্রাস দমন থেকে শুরু করে বিশ্বশাসন কাঠামো সংস্কার—বৈঠকে বিস্তৃত আলোচনা হয়। এ বছরের শেষে পুতিনের সম্ভাব্য ভারত সফরের প্রাক্কালে এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে বাণিজ্য। বর্তমানে রাশিয়া–ভারত বাণিজ্য মূলত জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীল। জয়শঙ্কর জানান, “ভারত থেকে ওষুধ, কৃষিপণ্য, বস্ত্র ইত্যাদি রপ্তানি বাড়ানো গেলে বাণিজ্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অশুল্ক বাধা ও প্রশাসনিক জটিলতা দ্রুত সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছি।” পাশাপাশি রাশিয়ার কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের জ্বালানি সম্পর্ক এই বৈঠকের অন্যতম মূলস্তম্ভ। জয়শঙ্করের বক্তব্য, “বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কেবল অর্থনৈতিক নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি।” উভয় দেশই তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত ও রাশিয়া যৌথ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জয়শঙ্কর বলেন, “সন্ত্রাসের সমস্ত রূপ ও প্রকাশের বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে লড়ব। সীমান্ত পারাপারের সন্ত্রাস থেকে নাগরিকদের রক্ষার বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট।”
সাম্প্রতিক সময়ে রুশ সেনায় ভারতীয় যুবকদের নিয়োগের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জয়শঙ্কর। তিনি জানান, কিছুজনকে মুক্ত করা হলেও কয়েকটি মামলা এখনো বাকি রয়েছে, পাশাপাশি কয়েকজন নিখোঁজ। এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান আশা করছে ভারত।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কারের পাশাপাশি জি ২০, ব্রিকস ও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো মঞ্চে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই দেশ। জয়শঙ্করের কথায়, “আধুনিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে বৈশ্বিক শাসন কাঠামোকে নতুনভাবে সাজানো জরুরি।”
ইউক্রেন, পশ্চিম এশিয়া ও আফগানিস্তানের মতো সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। ভারত আবারও জানায়, আলোচনা ও কূটনীতিই মতপার্থক্য মেটানোর একমাত্র উপায়।
কূটনৈতিক মহলের মতে, জয়শঙ্করের এই সফর মূলত পুতিনের আসন্ন ভারত সফরের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে সেই সফর হলে দ্বিপাক্ষিক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।




