কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :কলকাতা ,০৬ অক্টোবর :
বিহারে শুরু হতে চলেছে রাজনৈতিক উত্তাপের নতুন অধ্যায়। আজ, সোমবার বিকেল ৪টেয় ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) ঘোষণা করতে পারে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সূচি। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে রাজ্যের ভোটযুদ্ধের পালা, যা আগামী কয়েক সপ্তাহে রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে।
সূত্রের খবর, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্যানেশ কুমারের নেতৃত্বে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠক থেকেই ঘোষণা করা হবে ভোটের দিনক্ষণ। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন নির্বাচন কমিশনার সুকবীর সিংহ সান্ধু এবং বিবেক যোশি।
এই বৈঠকের আগের দিনই নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদল বিহারে গিয়ে ভোট প্রস্তুতির সার্বিক পর্যালোচনা করে ফিরেছে। তারা সব প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, এবং উৎসবের সময়সূচি বিবেচনা করে সম্ভাব্য ভোটের তারিখ নিয়ে আলোচনা করেছে।
বর্তমান বিহার বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২২ নভেম্বর। তার আগে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা সম্পন্ন করতে হবে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের তারিখ নির্ধারণে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে যাতে দীপাবলি ও ছট পুজোর মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের সঙ্গে ভোটের দিন না মিলে যায়। অক্টোবর ১৮ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে এই দুটি উৎসব থাকায় সময়সূচি সেই অনুযায়ী সাজানো হবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
কমিশনের উদ্দেশ্য, উৎসবের সময় নাগরিকদের সুবিধা বজায় রেখে ভোটগ্রহণে অংশগ্রহণ সর্বাধিক করা। ফলে প্রশাসনিক দিক থেকে মসৃণ ভোট আয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে এক উচ্চ-ঝুঁকির রাজনৈতিক সংঘর্ষ। একদিকে রয়েছে শাসকজোট— ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও জনতা দল (ইউনাইটেড)। অন্যদিকে মহাগঠবন্ধন— যার নেতৃত্বে রয়েছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও কংগ্রেস।
এবারের সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরাজ পার্টি’। রাজনীতির ময়দানে তৃতীয় শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে নেমেছে তারা।
২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ১২৫টি আসন পেয়ে গঠন করেছিল সরকার, আর মহাগঠবন্ধন পেয়েছিল ১১০টি আসন। তবে একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছিল আরজেডি, মোট ৭৫টি আসন নিয়ে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ওই নির্বাচনই ছিল কোভিড-পরবর্তী ভারতের প্রথম বড় ভোটযুদ্ধ। তৎকালীন ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৬.৯৩ শতাংশ।
এই বছর কমিশন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এবার সর্বাধিক ১২০০ জন ভোটার থাকবেন, আগের ১৫০০-র পরিবর্তে। ফলে রাজ্য জুড়ে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
এতে নিরাপত্তা রক্ষায় এবং ভোটের মসৃণ পরিচালনায় অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
বিহারের রাজনীতিতে এখন এক অদ্ভুত উত্তেজনা বিরাজ করছে। শাসকদল থেকে বিরোধী শিবির— সবাই প্রস্তুত দীর্ঘ নির্বাচনী অভিযানের জন্য। পোস্টার, স্লোগান, জনসভা— সব কিছুই এখন গরম হয়ে উঠছে।
আজ বিকেলের ঘোষণার পরই রাজনৈতিক দলগুলির কৌশল আরও পরিষ্কার হবে, আর বিহারের মানুষও জানতে পারবেন কবে তারা তাদের পরবর্তী সরকার গড়তে ভোট দিতে যাবেন।
এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু বিহার নয়, জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে— এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।




