কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :নয়াদিল্লি ,০৬ অক্টোবর :
অবশেষে ঘোষণা হয়ে গেল বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ। সোমবার বিকেল ৪টেয় নয়া দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) জানায়, আগামী ৬ ও ১১ নভেম্বর দুই দফায় ভোট হবে, আর ফল ঘোষণা করা হবে ১৪ নভেম্বর।

এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল বিহারের রাজনৈতিক মরশুমের সবচেয়ে উত্তপ্ত অধ্যায়— যেখানে মুখোমুখি হতে চলেছে শাসক এনডিএ জোট ও বিরোধী মহাগঠবন্ধন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্যানেশ কুমার জানান, বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২২ নভেম্বর, তার আগেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বিহারের মোট ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে তপশিলি উপজাতির জন্য এবং ৩৮টি আসন তপশিলি জাতির জন্য।
এই বছর নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আর ১২০০ জনের বেশি ভোটার থাকবেন না, যাতে ভোট নেওয়া সহজ ও দ্রুত হয়।
প্রতিটি বুথে ১০০ শতাংশ ওয়েবকাস্টিং চালু থাকবে— মানে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রই সরাসরি পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “প্রতিটি বুথ লেভেল অফিসারকে এবার পরিচয়পত্র বহন করতে হবে এবং ভোটারদেরও মোবাইল ফোন বুথের বাইরে রাখতে হবে, যাতে কোনও ধরনের অনিয়ম বা প্রভাব বিস্তার রোধ করা যায়।”
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (EVM)-এর ব্যালট পেপারেও আনা হয়েছে নতুনত্ব। প্রার্থীর ছবি এবার থাকবে রঙিন, এবং ছবির তিন-চতুর্থাংশ জুড়ে থাকবে মুখমণ্ডল। পাশাপাশি, ক্রমিক নম্বর থাকবে ৩০ পয়েন্ট ফন্টে মোটা অক্ষরে, আন্তর্জাতিক সংখ্যায়। এই নতুন ব্যালট ডিজাইন এই প্রথমবার ব্যবহার করা হবে বিহার বিধানসভা ভোটে।
চুনাও কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলির অনুরোধ মেনে ছট উৎসবের পরেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময় বিহারের বহু পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফেরেন, ফলে ভোটার উপস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল তিন দফায়, তখন কোভিড মহামারির চ্যালেঞ্জ ছিল প্রবল। কিন্তু এবারের ভোট অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক পরিবেশে— যদিও রাজনৈতিক লড়াইয়ের তীব্রতা অনেক বেশি বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
এই নির্বাচনে প্রধান লড়াই হবে মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং লালুপ্রসাদের আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন-এর মধ্যে।
বর্তমান বিধানসভায় এনডিএর আসন সংখ্যা ১৩১ — যার মধ্যে বিজেপির ৮০, জেডিইউ-র ৪৫, হাম (সেকুলার)-এর ৪ এবং ২ জন নির্দল। অন্যদিকে, মহাগঠবন্ধনের ঝুলিতে রয়েছে ১১১টি আসন— আরজেডি ৭৭, কংগ্রেস ১৯, সিপিআই(এমএল) ১১, সিপিআই(এম) ২, এবং সিপিআই ২।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লড়াই হতে চলেছে বিহারের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী নির্বাচন। নিতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ যদি ফের ক্ষমতায় আসে, তবে সেটি হবে তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের অন্যতম সাফল্য। অন্যদিকে, তেজস্বী যাদব নেতৃত্বাধীন আরজেডি এবং মহাগঠবন্ধনের জন্য এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
কমিশনের তরফে নেওয়া নতুন ব্যবস্থা— বুথে কম ভোটার, ওয়েবকাস্টিং, উন্নত ব্যালট পেপার— সবকিছুই নির্দেশ করছে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি।
গ্যানেশ কুমার বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি ভোট যেন স্বাধীনভাবে, নিরাপদে, ও আস্থার সঙ্গে প্রদান করতে পারেন মানুষ।”
রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রচারে। পোস্টার, রোডশো, জনসভা— সবকিছুতেই এখন নির্বাচনী আবহ স্পষ্ট। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিহারের প্রতিটি জেলাতেই এখন গরম হয়ে উঠছে রাজনীতির হাওয়া।




